[এটা নিছকই একটি মতামত। মাননীয় বিশেষ সহকারী মহোদয়ের মতো ‘ব্যক্তিগত’ মতামত। লেখাটি লিখেছেন সারাবেলার খবর-এর প্রধান সম্পাদক ইমরোজ বিন মশিউর। মতামতের জন্য সম্পাদকই দায়ী।]
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী তিনি। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক। তাঁর নাম ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি একাধারে লেখক, কলামনিস্ট, প্রযুক্তি স্থপতি। সেই সঙ্গে তিনি এখন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করেছেন।
গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চলমান নানা অস্থিরতার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা, প্রকাশ করেন উষ্মা। একপর্যায়ে তিনি আর এ পদে থাকবেন না বলেও মন্তব্য করেন সেখানে উপস্থিত একাধিক সূত্র বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানান।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিষয়টি ছিল ‘টক অব দ্য টাউন’। সন্ধ্যার পর এনসিপি-সুপ্রিমো নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তাঁর বাসভবন যমুনাতে যান। সাক্ষাৎ শেষ করে সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির বাংলা বিভাগকে বলেন- তিনি (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পদত্যাগের কথা ভারছেন।
তাঁর এই মন্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। টক অব দ্য টাউন হয়ে যায় টক অব দ্য কান্ট্রি। সারা দেশের সচেতন মানুষ ধরেই নিয়েছিলেন- পদত্যাগ করছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি পদত্যাগ করলে কী পরিস্থিতি হবে এ ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ-সচেতন মানুষ। রাতজুড়ে কী হবে কী হবে ভাব। এমনকী এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা আজ সকালে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লেখেন- জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত রাতটিই ছিল তাঁর কাছে অন্যতম কঠিন।
এমন উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার মাঝেই আজ সকালে প্রধান উপদেষ্ঠার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব একটি ফেসবুক পোস্ট দেন। ওই পোস্টে তিনি লেখেন- পদত্যাগ করছেন না প্রধান উপদেষ্টা।
স্বস্তি ফেললেন সাধারণ মানুষ, যাঁদের কাছে প্রধান উপদেষ্টা একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ। তবে কারো কারো কাছে বিষয়টি ভালো লাগেনি, কাদের কাছে লাগেনি- তা বুঝতে নিশ্চয়ই পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
যাই হোক- বিশেষ সহকারীর ‘বিশেষ’ ফেসবুক পোস্টটি দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পেল। বাঙলাদেশের শীর্ষ সব গণমাধ্যম তাঁর এই ফেসবুক পোস্টের ওপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ করল। তৈরি হলো কনটেন্ট, গ্রাফিক কার্ড। যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল পুরো গণমাধ্যম।
এরপর ঘটল আশ্চর্য ঘটনাটি। সকালে দেওয়া ফেসবুক পোস্টটি দুপুরের আগেই মুছে দিলেন তিনি। পরে আরেকটি পোস্টে লিখলের- ‘প্রধান উপদেষ্টা স্যারের বিষয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসটি আমার ব্যক্তিগত মতামত’।
কিন্তু কেন করলেন তিনি এমন?- এ বিষয়ে তাঁর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। ফের তৈরি হলো ধোঁয়াশা। তবে কী…
এ বিষয়ে একই সাথে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম ও সমাজমাধ্যম বিশ্লেষক ও সচেতন-সাধারণ মানুষের সাথে কথা হয়। তাঁদের সাথে কথা বলে জানা গেল- বিষয়টি তাঁদের কেউই ভালোভাবে নেনি। তাদের মন্তব্য- এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে সমাজমাধ্যমের মতো পাবলিক প্ল্যাটফর্মে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও অন্যান্য আরো বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করে পরে তা মুছে ফেলা রীতিমতো আপত্তিকর। একাধিক রাষ্ট্রীয় ইস্যু নিয়ে এমন মন্তব্য ‘করে, পরে না করা’ ছেলেমানুষী। যা তাঁর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে কাম্য নয়। এটা সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্টের সাথে মশকরা, যা অবশ্যই পরে একটি খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।
অবশ্য অনেকেই বলেন- অপ্রয়োজনীয় ও বাজে মন্তব্য করা এদেশের উচ্চপদস্থদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর আগে এই অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক পদস্থ ব্যক্তিকেই অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করতে শোনা গেছে।