৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৬:৪৫ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির খবর শুনে কোমা থেকে জেগে উঠলেন তরুণী

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৬:৪৫ পিএম

হৃদ্‌যন্ত্রের বিরল সংক্রমণে কোমায় চলে গিয়েছিলেন চীনের হেনান প্রদেশের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণী। তবে তরুণী কোমায় থাকাকালীনই পরিবারের হাতে এলো এক সুখবর। জিয়াং চেননান নামে ওই তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ভর্তির চিঠিও পাঠিয়েছে। সেই ভর্তির চিঠিই হয়ে উঠল আশ্চর্য এক ‘ওষুধ’, যা জিয়াংকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে জীবনযুদ্ধে। সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুনে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ‘গাওকাও’ শেষ করেন জিয়াং চেননান। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজের জীবন গড়ে তোলার। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। পরিবার দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে।

চিকিৎসকেরা জানান, জিয়াংয়ের শরীরে ধরা পড়েছে ‘ফুলমিন্যান্ট মায়োকার্ডাইটিস।’ এটি এক বিরল ও মারাত্মক রোগ, যেখানে হঠাৎ হৃদ্‌যন্ত্রে তীব্র প্রদাহ হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। ভাইরাস, মানসিক চাপ কিংবা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এর কারণ হতে পারে, তবে জিয়াংয়ের ক্ষেত্রে সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

অবস্থার অবনতি হলে জিয়াংকে অন্য এক বড় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই কোমায় চলে যান তিনি। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) কৃত্রিম হৃদ্‌যন্ত্র-ফুসফুসের সহায়তায় তাকে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছিল। এদিকে পরিবারের অবস্থা নাজুক। জিয়াংয়ের চিকিৎসার খরচের পেছনে এরই মধ্যেই ২ লাখ ইউয়ানের (প্রায় ২৮ হাজার মার্কিন ডলার) বেশি খরচ হয়ে গেছে। এই টাকা জোগাড় করতে পরিবার বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়েছে।

এর মধ্যেই একদিন এল সুসংবাদ। জিয়াং কোমায় যাওয়ার অষ্টম দিন তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চিঠি এলো ডাকবাক্সে। মেয়ের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ সফল হয়েছে। বাবা আর দেরি করলেন না। চিঠি হাতে নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে মেয়ের কাছে পৌঁছালেন। কোমায় থাকা মেয়ের কানে কানে বললেন, আমরা সবাই খুব খুশি, তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছ! জিয়াংয়ের বাবা দেখলেন এক চমকপ্রদ দৃশ্য, তার মেয়ের চোখের পাতা কেঁপে উঠেছে। চিকিৎসকরা বললেন, কোমা থেকে ফিরে আসার লক্ষ্যে সাড়া দেওয়ার লক্ষণ হতে পারে। পরিবারে নতুন করে আশার আলো জ্বলে উঠল।

পরদিন সকালে ঘটলও আরও বিস্ময়কর ঘটনা, জিয়াং চেননান জ্ঞান ফিরে পেলেন। ভিডিও কলে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেন, যদিও কথা বলা তখনো কষ্টকর ছিল। কিন্তু দুই হাত তুলে ‘ওকে’ ভঙ্গি করে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি খুশি এবং শুনতে পাচ্ছেন সবকিছু। চিকিৎসকরা বললেন, তার হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যক্ষমতা এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক এবং অবস্থা স্থিতিশীল। কীভাবে এত দ্রুত তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন, তার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

পরিবার জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরেই জিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করবেন। জিয়াংয়ের বাবা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা যতই কঠিন হোক, আমি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাব। এটা তার স্বপ্ন। সে যেন নিজের জীবন নিজের মতো করে গড়তে পারে, সেই সুযোগ আমি দেব। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গল্প ছড়িয়ে পড়তেই হাজারো মানুষ শুভকামনা জানিয়েছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x