৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ৫ অক্টোবর ২০২৫, ২:২১ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

বিশ্ব রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় জিহাদের উদ্ভাবিত রোবট পেল স্বর্ণপদক

প্রকাশ : ৫ অক্টোবর ২০২৫, ২:২১ এএম

স্বপ্ন পূরণের আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন চুয়াডাঙ্গার দর্শনার এক তরুণ উদ্ভাবক। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন কমপিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশন (ওয়াইস) ২০২৫-এ শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি হিসেবে স্বর্ণপদক অর্জন করেছে বাংলাদেশের ‘হেক্সাগার্ড রোভার’। এ রোবটটির উদ্ভাবক হলেন জাহিদ হাসান জিহাদ, তিনি দর্শনা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং চুয়াডাঙ্গা সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা।

চার দিনব্যাপী এ বৈশ্বিক আয়োজনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় দুই শতাধিক দল অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার আইটি ও রোবোটিক্স ক্যাটাগরিতে বিচারকদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিহাদের রোভারটি। কঠোর প্রতিযোগিতার শেষে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশ, যা দেশের জন্য এক বিশাল অর্জন। জিহাদের তৈরি ‘হেক্সাগার্ড রোভার’ একটি বহুমুখী সমাধান নিয়ে এসেছে। রোবটটি মূলত তৈরি হয়েছে জরুরি পরিস্থিতি, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং সামরিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে।

জিহাদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার থেকে সামরিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ রোভার। এর রয়েছে ১ হাজার ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহ্য করার ক্ষমতা ও স্টেইনলেস স্টিল বডি। ধোঁয়া ভেদকারী ক্যামেরা ও গ্যাস সেন্সর যুক্ত থাকায় এটি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা যেখানে পৌঁছাতে অক্ষম, সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ, ৬-ডিওএফ মেকানিক্যাল আর্ম, মেটাল ডিটেকশন এবং সিগন্যাল জ্যামিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিপদজনক বিস্ফোরক শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে এটি সক্ষম। সীমান্ত নজরদারিতে নাইট ভিশন ক্যামেরা, সেন্সর ও লাইভ ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে সীমান্ত ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি করতে পারে।

তরুণ এ উদ্ভাবক বলেন, এ ছাড়া শিল্প কারখানায় বিষাক্ত গ্যাস শনাক্ত করা, বন্যপ্রাণী নিয়ন্ত্রণ করা এবং যুদ্ধ বা দুর্যোগ এলাকায় খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিয়ে ভয়েস কমিউনিকেশনের মাধ্যমে মানুষকে আশ্বস্ত করার মতো মানবিক কাজও করবে এ রোবট।

জানা গেছে, জাহিদ হাসান জিহাদ প্রায় এক বছর ধরে তার নিজস্ব ক্লাব চুয়াডাঙ্গা সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স ক্লাবে নিরলস পরিশ্রম করে এ রোভার তৈরি করেছেন। এ উদ্ভাবনী কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তোহা বিন আসাদ দীপ।

জিহাদের এই আন্তর্জাতিক সাফল্য কিন্তু রাতারাতি আসেনি। এর আগে তিনি ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন, ওয়াইস বাংলাদেশ রাউন্ড-এ সিলভার মেডেল এবং মর্যাদাপূর্ণ ড্রিমস অব বাংলাদেশ স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

তার উদ্ভাবিত ‘ট্রেন সিকিউরিটি সিস্টেম’ গত বছর জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। জিহাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ছোটবেলা থেকেই রোবটিক্সের প্রতি কৌতূহল ছিল জিহাদের। বহু বাধা পেরিয়ে সে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে।

দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেএইচ তাসফিকুর রহমান তরুণ উদ্ভাবক জিহাদকে ‘রত্ন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তার এ উদ্ভাবনী প্রকল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। জিহাদ নিঃসন্দেহে নতুন প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার এক বিশাল অনুপ্রেরণা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, জিহাদের এ অর্জনে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হয়েছে। আমরা তার সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x