আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির একই ঘটনায় কেউ হয়েছেন আসামি, আবার কাউকে করা হয়েছে সাক্ষী। এমনকি যেসব কর্মকর্তা ঋণ দিতে চাননি তারাও আছেন আসামির তালিকায়। এমন সব পর্যালোচনা তুলে ধরে ২০১৫ সালে রাজধানীর পল্টন থানায় করা একটি মামলা আবার তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ফেরত পাঠিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত।
আইনজীবীরা বলছেন, মনগড়া চার্জশিটের কারণে কঠিন হয়ে পড়বে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আর দুদক সংস্কার কমিশন প্রধান বলছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা দুর্বল করার দায়ে দুদকের কার্যক্রমেরই তদন্ত করা উচিত।
দেশে ব্যাংক খাতে সমালোচিত নাম, বেসিক ব্যাংক। এই ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে ৫০টির বেশি। তারই একটি হয়, ২০১৫ সালে পল্টন থানায়। যেখানে আসামি করা হয় ১৮ জনকে। ৭ বছরের তদন্ত শেষে ২০২২ সালে চার্জশিট দেয় দুদক।
এরপর এজাহার, চার্জশিট, আনুষঙ্গিক নথি পর্যালোচনা করে গেল ৩ ফেব্রুয়ারি আরও তদন্তের জন্য ফের দুদকে পাঠিয়ে দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১। যেখানে অসংগতি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, বোর্ড সভায় ঋণ প্রস্তাবে কোনো সদস্য নোট অব ডিসেন্ট দেননি। অথচ চার্জশিটে শুধু বোর্ডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বোর্ডের বাইরে যেসব কর্মকর্তা ঋণ দিতে চাননি, তাদেরও করা হয়েছে আসামি। মানা হয়নি বেসিক ব্যাংক ক্রেডিট পলিসি গাইডলাইন। একই অভিযোগে কাউকে করা হয়েছে আসামি আবার কেউ হয়েছেন সাক্ষী।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, একই কাজ করে পরিচালনা পর্ষদের সবাই যদি সাক্ষী হয়, তাহলে চেয়ারম্যানও হবে। তবে উনাকে সাক্ষী না করে আসামি করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর মতে, ব্যাংকে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও মনগড়া চার্জশিট মামলাকে শুধু দুর্বলই করেনি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে দুদকের সক্ষমতাকে।
বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসেন বলেন, এই তদন্তে এতো সময় কেন লাগবে? অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হলে, সেই অর্থকে ট্রাক বা ট্রেস ও কারা কারা জড়িত সব তো ডকুমেন্টে থাকবে।
দুদক সংস্কার কমিশন প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, বেসিক ব্যাংকের মামলাগুলো যে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করা হয়েছে, এটা তারই প্রমাণ। সঠিক ঘটনা সামনে আনতে এই ব্যাংক সংশ্লিষ্ট দুদকের পুরো কার্যক্রমেরই তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। পাশপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকেই আনতে হবে জবাবদিহিতার আওতায়। উল্লেখ্য, আগামী চার জুন নতুন তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন আদালত।