১৮ জুন ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৪:৪৯ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির আদেশ স্থগিত

প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৪:৪৯ পিএম

👁 42 views

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে বলে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওই নির্দেশনা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে আদালত রুল জারি করেছেন।

এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রিটকারীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। শুনানি শেষে সংবাদমাধ্যমে তিনি এসব তথ্য জানান।

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে এই মামলায় বিনা পয়সায় লড়েছি। মূলত পূর্বানুমতি ছাড়া পুলিশ এজাহারনামীয় আসামি, এমনকি তদন্তে প্রাপ্ত আসামিও গ্রেপ্তার করতে পারবেন না বলে যে আদেশ, এটি সর্ষের ভেতরে ভূত রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে যেকোনো নাগরিকের হয়রানি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কোনো বিশেষ পক্ষকে সুবিধা দিতে এ আদেশ জারি করা হয়েছিল কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, খোলা চোখে মনে করলে মনে হয় কিছু নিরপেক্ষ মানুষকে রক্ষা করতে এই আদেশ। তবে আমি মনে করি তা নয়। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে যে বাধ্য-বাধকতা, এর মাধ্যমে বরং নিরপরাধ নাগরিকদের প্রকারন্তরে ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ঠেলে দেওয়ার একটা প্রবণতা হতে পারে।

এই আইনজীবী বলেন, দেশে প্রচলিত যে বিচারিক প্রক্রিয়া, যেমন- পেনাল কোড, সিআরপিসি, সংবিধান এবং পুলিশ রেগুলেশন্স অব বেঙ্গলে পুলিশ কিভাবে কাজ করবে, তা উল্লেখ করা আছে। তাই আদেশটি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সিআরপিসির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, পুলিশ রেগুলেনন্স অব বেঙ্গলের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

তিনি মনে করেন, এই অফিস আদেশটি পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এর ফলে সমাজে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে- এমনকি এরকম একটি আদেশ পালন করতে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে অতীতে যেভাবে অভিযোগ দেখেছিলাম, সেই আশঙ্কাও ফের তৈরি হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ফৌজদারি অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে, এটাই শ্বাশত নিয়ম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে বলে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের শুনানি গত সোমবার (২১ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।

ওইদিন আদালতে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ রিট মামলায় স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, ডিবি প্রধান, সিআইডি প্রধান, এসবি প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে।

গত ২০ এপ্রিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে বলে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন রিটটি করেন।

এর আগে গত ৯ এপ্রিল ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় তদন্তে উপযুক্ত প্রমাণ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদেশে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংক্রান্তে রুজুকৃত মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অধিক। এসব মামলার এজাহারনামীয় কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারের নিমিত্তে উপযুক্ত প্রমাণসহ অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তার করতে হবে। উপযুক্ত প্রমাণ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনার মামলার এজাহারভুক্ত কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x