১৭ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসার বিশ্লেষণে বিবিসি

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

👁 31 views

হামলা-পাল্টা হামলা নিয়ে এক নাটকীয় মোড়ের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেন। চার দিনের ব্যাপক সীমান্ত সংঘর্ষসহ ক্রমেই প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। তারা এমন একটি পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, যা অনেকেই আশঙ্কা করেছিল এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক ব্যাকচ্যানেল ও আঞ্চলিক খেলোয়াড়দের পাশাপাশি মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তির কয়েক ঘণ্টা পরই ভারত অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুললেও তা অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান। দেশটি জোর দিয়ে বলছে, তারা অস্ত্রবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তার বাহিনী দায়িত্ববোধ ও সংযম দেখিয়েছে।

গত মাসে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পরই দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। কথার লড়াই ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পর ভারত-পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে বিমান হামলা শুরু করে। কয়েক দিন ধরে বিমান হামলা, গোলাগুলি এবং শনিবার সকাল পর্যন্ত উভয় পক্ষই একে অপরের বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ তোলে। দুই দেশই একে অপরের আক্রমণ প্রতিহতের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি করার দাবি করে।

ওয়াশিংটন ডিসির ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একজন সিনিয়র ফেলো তানভি মদন বলেন, বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা সম্পর্কে আমরা এখনও অনেক কিছু জানি না। তবে এটা স্পষ্ট যে, কমপক্ষে তিনটি দেশ উত্তেজনা কমানোর জন্য কাজ করেছে। এর মধ্যে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এবং সৌদি আরবও আছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার পাকিস্তানি গণমাধ্যমকে বলেন, তিন ডজন দেশ এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় যুক্ত ছিল। যার মধ্যে তুরস্ক, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে।

যদিও এবারের উত্তেজনার শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষণীয়ভাবে দর্শক বলে মনে হয়েছিল। উত্তেজনা বাড়ার পরও বৃহস্পতিবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি যুদ্ধে জড়াবে না, যা মৌলিকভাবে আমাদের কোনো বিষয় নয়। আমেরিকা ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানিদের অস্ত্র সমর্পণ করতে বলতে পারে না। আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে বিষয়টি অনুসরণ করে যাব।

লাহোর-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এজাজ হায়দার বিবিসিকে বলেন, একটি মাত্র পার্থক্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অতীতের মতোই ছিল। মূল পার্থক্য ছিল, এবার তারা প্রথমে হাত গুটিয়ে বসেছিল। তবে যখন তারা বুঝতে পেরেছিল, পরিস্থিতি কীভাবে ঘটছে তখনই তারা এগিয়ে এসেছিল। ভারতীয় কূটনীতিকরা এবার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তির পথ চিহ্নিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চাপ, সৌদি মধ্যস্থতা এবং দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মধ্যে সরাসরি ভারত-পাকিস্তান চ্যানেল।

বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকার পরিবর্তন হলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অপরিহার্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পদক্ষেপ নিয়েছে। নিজস্ব কর্মকর্তারা অতিরঞ্জিত কিংবা দিল্লি ও ইসলামাবাদ অবহেলা করলেও বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, সংকট ব্যবস্থাপক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল রয়ে গেছে।

তবে শনিবারের ঘটনার পর অস্ত্রবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিদেশনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, এই অস্ত্রবিরতি অবশ্যই ভঙ্গুর হবে। আকাশছোঁয়া উত্তেজনার মধ্যে এটি খুব দ্রুত ঘটেছিল। তাড়াহুড়ো করে তৈরি করায় এই চুক্তিতে এমন উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় যথাযথ নিশ্চয়তা এবং বিশ্বাসের অভাব থাকতে পারে। তাছাড়া অস্ত্রবিরতিতে রাজি হলেও দুই দেশের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত থাকছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।

ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে চান ট্রাম্প
এনডিটিভি জানায়, অস্ত্রবিরতি ঘোষণার মাত্র ১৬ ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে নয়াদিল্লি কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ দাবি করে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার বিরোধিতা করে। ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের পর এখনও দেশ দুটি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প অস্ত্রবিরতি সম্পর্কে লিখেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের শক্তিশালী, বিচক্ষণ এবং সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসা করি। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করতে পেরে আমেরিকা গর্বিত। যদিও বিষয়টি আলোচনা হয়নি, তবুও আমি উভয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি কাশ্মীর ইস্যুতে সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অস্ত্রবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তাঁকে ফোন করেছেন এবং পাকিস্তানের সংযম প্রদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সৌদি আরব, ইরান অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x