প্রতিদিন ভোর ৭টা থেকে সাইকেলের সামনে ও পেছনে ৬-৮টি ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার ঝুলিয়ে ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌছে দেয় ইপিআই পোর্টাররা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যেক ভোরে তারা বেরিয়ে পড়ে দূরদূরান্তে। চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় সামান্য বেতনে তাদের সংসার চলে না তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা কাজ করে চলে।
মাগুরা সদরের ১৩টি ইউনিয়নের প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন ভ্যাকসিন পৌছানোর কাজ করে মাত্র তিনজন পোর্টার। মাগুরা সদর থেকে ১৩টি ইউনিয়নের দূরত্ব ৭-৮ কিলোমিটার। একাজে যেখানে প্রয়োজন ছয়জন ভ্যাকসিন পোর্টার সেখানে তিনজনের পক্ষে কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় সদরের কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিভিন্ন ভ্যাকসিন পৌছে দেয় তারা। আবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্র থেকে পুনরায় সেই ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার নিয়ে তারা সদর কেন্দ্রে ফিরে আসে। চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে আছে বিপাকে।
একাজে ২৪ দিনের হাজিরায় এক-একজন কর্মীকে দেওয়া হয় মাত্র ৯ হাজার টাকা। পোর্টাররা প্রতিদিন প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরকারের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিসিজি টিকা, পেন্টা টিকা, পিসিবি টিকা, ওপিবি টিকা, আইপিবি টিকা, এমআর টিকা, টিটি টিকাসহ করোনা টিকা পৌছানোর কাজ করে।
সদরে কর্মরত ইপিআই পোর্টার বাদশা মিয়া বলেন, আমি ১৯৯০ সালে একাজে মাস্টার রোলে যোগদান করি। আজ ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় বিপাকে আছি। মাগুরা সদরের ১৩টি ইউনিয়নের প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে আমরা ভ্যাকসিন ক্যারি করি। ৮ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যেতে হয় প্রতিটি কেন্দ্রে। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা একাজ করছি। জীবনের তাগিদে সংগ্রাম করছি আমরা। মাসে ২৪ দিনের হাজিরা হিসেবে আমরা একেকজন ৯ হাজার টাকা পেয়ে থাকি। এ টাকায় সংসার চলে না। প্রতিদিন সকাল-বিকাল আমাদের কাজ করতে হয়। তাই সরকারের কাছে দাবি, আমাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, বোনাস দেওয়া হোক এবং চাকরি জাতীয়করণ করা হোক।
পোর্টার জসিম ও কিসলু জানান, মাত্র তিনজন কর্মীর পক্ষে সদরের ১৩টি ইউনিয়নের কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভ্যাকসিন ক্যারি করা খুবই কষ্টসাধ্য। একাজে অন্তত ছয়জন কর্মী প্রয়োজন, সেখানে আমরা কাজ করছি মাত্র তিনজন। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি এ সমস্যার সমাধানের জন্য, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। একাজে আমাদের সামান্য বেতন দেওয়া হয়, তাতে আমাদের সংসার চলে না। বোনাস বা অতিরিক্ত কোনো টাকা আমরা পাই না। সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন- আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হোক।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. আফজাল হোসেন বলেন, মাগুরা সদরের ১৩টি ইউনিয়নে তিনজন ইপিআই ভ্যাকসিন পোর্টার কাজ করছে। তারা স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দাতা সংস্থার আওতায় কর্মরত। তাদের চাকরি স্থায়ী নয়। তারা কোনো উন্নয়ন বা রাজস্ব খাতের কর্মী নয়। তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। প্রতিমাসে তাদের ২৪ দিনের হাজিরা দেওয়া হয়। তাদের চাকরির স্থায়ী করার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে পারে।