‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’ এ স্লোগানে মুখর হয়ে উঠল ফেনীর রাজপথ। চার প্রধান দাবিতে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম অভিমুখী রোডমার্চ ফেনীতে পৌঁছেছে। দেশের বামপন্থি দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে আয়োজিত রোডমার্চ শুক্রবার রাতে ফেনী পৌঁছায়। শনিবার সকালে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আজ (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর হাজারী রোড মোড় থেকে শুরু হয় মিছিল। মিছিলটি মহিপাল হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শেষ হয়েছে। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। কর্মসূচির মূল স্লোগান ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ফেনীর রাজপথ।
রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টেরিম সরকার, সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার’, ‘বন্দর-করিডর, বিদেশিদের দেব না’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘মার্কিন কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল কর’, ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, ‘মার্কিন ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ প্রভৃতি।

সমাবেশে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) রোডমার্চ কর্মসূচির চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- নিউমুরিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া চলবে না, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা করতে হবে, রাখাইনে করিডর দেওয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে; স্টারলিংক, সমরাস্ত্র কারখানা, করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে এবং মার্কিন-ভারতসহ ‘সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী দেশগুলোর’ সঙ্গে বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি প্রকাশ করতে হবে ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে।
রুহিন হোসেন বলেন, আমরা মনে করি, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা, আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষা। গণ-অভ্যুত্থানকে কোনোভাবে বিতর্কিত করা যাবে না। পাহাড়িদের ওপর নির্যাতন করা যাবে না, দেশে কোনোভাবে বৈষম্য তৈরি করা যাবে না, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। ইতিপূর্বে বিভিন্ন আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সব শহীদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এ আন্দোলন দীর্ঘদিনের।

রুহিন হোসেন আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি, হৃৎপিণ্ড। আমরা আশা করব, বিগত সরকারের ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর ইজারা দেওয়াসহ যে কাজ করতে চাইছে, তা থেকে তারা পিছু হটবে। আর এটা নিয়ে আমাদের আজকের রোডমার্চের শেষে আর কোনো বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে হবে না।
সিপিবির ফেনী জেলা সভাপতি বিমল শীলের সভাপতিত্বে ও বাম গণতান্ত্রিক জোট ফেনীর সমন্বয়ক জসীম উদ্দীনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা।
বাসদ নেতা মাসুদ রানা বলেন, গণহত্যার বিচার করতে হবে, রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের মামলা দেওয়া হচ্ছে, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যাবে না। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল করতে হবে।

ফেনীর রোডমার্চ ও সংক্ষিপ্ত পথসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণমুক্তির সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন নাসু, বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন, বাসদের (মাহবুব) মহি উদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পাটির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের মাসুদ খান, জাতীয় গণফ্রন্টের রজত হুদা প্রমুখ। কর্মসূচিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ফেনীর নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ফেনীর শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশ শেষে বেলা ১১টায় মিছিল নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীরা। পথে চট্টগ্রামের মিরসরাই, নগরের এ কে খান এলাকায় পথসভা করার কথা রয়েছে নেতাকর্মীদের। পরে বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে দুই দিনের এই রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। শুক্রবার রাতে ফেনীর হাজারী রোডের একটি গণমিলনায়তনে রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীরা রাতযাপন করেন।