১ জুলাই ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ১ জুলাই ২০২৫, ১১:০৭ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

‘মুক্তি অথবা মৃত্যু’—বছর ঘুরে ফিরে এলো রক্তাক্ত জুলাই

প্রকাশ : ১ জুলাই ২০২৫, ১১:০৭ এএম
যে জুলাই জন্ম দিয়েছে নতুন আশার, নতুন স্বপ্নের- শহীদদের সেই স্বপ্নেরা কতটা বাস্তবতার পথ ধরে হাঁটছে; সামনের দিনে অপেক্ষা করছে সেই হিসাব-নিকাশ।

জুলাই ২০২৪। ৫৪ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশে লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসের ক্যালেন্ডারে জায়গা করে নেওয়া নতুন এক রক্তাক্ত ইতিহাস। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস মাস। যে মাসে ছাত্রজনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায় শেখ হাসিনার সরকার। নড়ে ওঠে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী মসনদ। চোদ্দশত শহীদ আর প্রায় ২০ হাজার আহতের আত্মত্যাগের ঋণ এখনো খুঁজে ফিরছে, নতুন বাংলাদেশকে।

২০২৪ এর ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটাপদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। তখন ছাত্রসমাজের দাবিটা ছিল ভীষণ সাধারণ- ৫৫ ভাগ কোটার গ্রাস থেকে বেরিয়ে মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া।

গত ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটিই ছিল প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। তখন সেটা বুঝতে পারেনি হাসিনার সরকার। তাইতো এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের রাজাকার তকমা দেন খোদ শেখ হাসিনা নিজেই।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ক্ষণে-ক্ষণে কটাক্ষ করেই ক্ষান্ত হননি তৎকালীন সরকারপ্রধান। বল প্রয়োগ, গুম, খুন… সব কিছু করে ছাত্র-ছাত্রীদের এমন খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছিলেন, যেখানে তাদের পথ খোলা ছিল একটাই- ‘মুক্তি অথবা মৃত্যু’। তাইতো শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে আদালত থেকে কোটা বাতিলের রায় এনেও, আবু সাঈদদের জীবনের দেনা মেটাতে পারেননি শেখ হাসিনা।

অতঃপর কোটাবিরোধী সংগ্রাম রূপ নেয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে। ১৬ বছরে সীমাহীন বৈষম্য-গুম-খুন-দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ জনতার স্রোত মিশে যায় রাজপথে। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী নামিয়ে দিয়েও দমানো যায়নি মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভের আগুন।

শেষমেশ, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে ১৮ ও ১৯ জুলাই ছাত্রজনতার ওপর চালানো হয় বর্বর হত্যাযজ্ঞ। কিন্তু, শোষকের বন্দুক থেকে যতই গুলি বেরিয়েছে, ততই ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গ। দফায়-দফায় দেয়া কারফিউ ভেঙে ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, দলমত নির্বিশেষে পথে নামে সব শ্রেণীর মানুষ। আন্দোলন রূপ নেয় গণ-অভ্যুত্থানে।

৩ আগস্ট ঢাকার শহীদ মিনার চত্বরে লাখো জনতার জমায়েত থেকে ঘোষণা আসে একদফা- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এরপর ৪ আগস্ট মরণকামড় দেয় আওয়ামী লীগ। পুলিশের সাথে অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়েন তাদের নেতাকর্মীরা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নজিরবিহীন সহিংসতা। শুধু একদিনে ঝরে যায় শতাধিক প্রাণ।

ব্যাপক রক্তপাত ও প্রাণহানির পরও গদি ছাড়তে চাননি শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট ভোর থেকে জারি করা হয় কঠোর কারফিউ। কিন্তু, শত বাধার দেয়াল ভেঙে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ-লাখ মানুষ এগিয়ে যায় গণভবনের দিকে।

চতুর্দিকে বেগতিক পরিস্থিতির মাঝে সেনাবাহিনী ব্যারিকেড তুলে নিলে ঢাকার রাজপথ দখলে নেয় ছাত্রজনতা। আর ততক্ষণে খবর আসে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার। ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা গণভবনে ৫ আগস্ট যে দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল, নতুন ইতিহাসের পাতায় তার নাম ৩৬ জুলাই।

সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, জুলাইয়ের সঙ্গে ৯০ বা ৬৯-এর কোনো তুলনা হয় না। কারণ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন এটির নেতৃত্ব দেয়নি। এটি নেতৃত্ব দিয়েছে বিচ্ছিন্ন কয়েকজন তরুণ, যাদের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। আমরা যদি ধর্মীয়ভাবে দেখি তবে আবাবিল পাখির যে ঘটনা, জুলাই হচ্ছে তাই।

যে জুলাই জন্ম দিয়েছে নতুন আশার, নতুন স্বপ্নের- শহীদদের সেই স্বপ্নেরা কতটা বাস্তবতার পথ ধরে হাঁটছে; সামনের দিনে অপেক্ষা করছে সেই হিসাব নিকাশ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x