Site icon সারাবেলার খবর

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা খাত আরও শক্তিশালী করার ঘোষণা, কিন্তু কেন?

প্রতিরক্ষা খাতে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। একই সময়ে রাশিয়াকে ‘হুমকি’ হিসেবে দেখছে দেশটি। সেই হুমকি মোকাবিলায় যুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এলো প্রতিরক্ষা খাত আরও শক্তিশালী করার ঘোষণা। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। গত রোববার (১ জুন) রাশিয়ার কয়েকটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় জেলেনস্কি বাহিনী। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার স্ট্রাটেজিক ডিফেন্স রিভিউ বা কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা (এসডিআর) নামে যুদ্ধপ্রস্তুতির পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

সোমবার (২ জুন) স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে এক ভাষণে স্টারমার বলেন, ‘বিশ্বে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে দেশকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে।’ এসময়, নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে ১২টি অ্যাটাক সাবমেরিন নির্মাণের পরিকল্পনা ছাড়াও পরমাণু ও অন্যান্য অস্ত্রের ক্ষেত্রে বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দেন।

স্টারমার বলেন, আমরা এখন যে হুমকির মুখে আছি, তা স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, তাৎক্ষণিক ও অনিশ্চিত। ইউরোপে যুদ্ধ, নতুন পারমাণবিক ঝুঁকি, প্রতিদিন সাইবার আক্রমণ এবং ব্রিটিশ জলসীমা ও আকাশে রাশিয়ার আগ্রাসন এর প্রমাণ।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সংঘাত প্রতিরোধের সেরা উপায় হলো—তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেয়া।’ এসডিআর পরিকল্পনায় রাশিয়াকে ‘আশু ও গুরুতর হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। অন্যদিকে চীনকে উল্লেখ করা হয় ‘পরিশীলিত ও স্থায়ী চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে।

২০২১ সালের পর এটা যুক্তরাজ্যের প্রথম প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা যা ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব জর্জ রবার্টসনের নেতৃত্বে তৈরি হয়। এসডিআর-এ ৬২টি সুপারিশের সবকটিই ব্রিটিশ সরকার গ্রহণ করেছে। এসডিআর সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ সরকার বলেছে, তারা মজুদ ও অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, যা প্রয়োজনে বাড়ানো যেতে পারে। মোট ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় (২ বিলিয়ন ডলার) করে কমপক্ষে ছয়টি যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করা হবে। যেখানে ৭ হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘অকাস’ সামরিক জোটের অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের শেষ দিকে ১২টি নতুন অ্যাটাক সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে যুক্তরাজ্যের। অর্থাৎ প্রতি ১৮ মাসে একটি নতুন সাবমেরিন তৈরি করা হবে। এটি এসডিআর-এ বর্ণিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক।

এদিকে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, তারা নিজস্ব পারমাণবিক ওয়ারহেড প্রোগ্রামে ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড (২০.৩ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করবে। এসডিআর নতুন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরির বিষয়টি সুপারিশ করেছে। এছাড়া গ্লোবাল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট প্রোগ্রামের আওতায় জাপান ও ইতালির সাথে যৌথভাবে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান উৎপাদনও সুপারিশ করেছে।

সেনাবাহিনীর আকার মোটামুটি একই থাকবে। তবে এসডিআর-এ নিয়মিত সেনার সংখ্যা সামান্য বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ৭১ হাজার সেনা রয়েছে। সেনা সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধির পরিবর্তে এসডিআর প্রযুক্তি, ড্রোন ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে ‘প্রাণঘাতী শক্তি দশগুণ বৃদ্ধি’ করার পরামর্শ দিয়েছে। এটা করার জন্য ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১ বিলিয়ন পাউন্ড (১.৩৫ বিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে এআই চালিত সফটওয়্যার ‘ডিজিটাল টার্গেটিং ওয়েব’ তৈরি করারও পরিকল্পনা করছে।

Exit mobile version