২৫ আগস্ট ২০২৫ সোমবার
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ৪:৪৭ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সসহ ১১ দেশ রোহিঙ্গা সংকটে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ৪:৪৭ পিএম

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আট বছরপূর্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের ১১টি দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আজ সোমবার সকালে ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্স হ্যান্ডেল এবং ফেসবুক পেইজে যৌথ বিবৃতিটি দিয়েছে।

১১ দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আট বছর পেরোনোর পর আমরা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সেই কর্মকাণ্ড স্মরণ করছি, যার ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছিল। বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছেন। এখনও আশ্রয়শিবিরে থাকতে নতুন করে লোকজন আসছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা রোহিঙ্গাদের দৃঢ়তা ও সহনশীলতাকে সাধুবাদ জানাই, যারা দীর্ঘদিন ধরে কঠিন বাস্তবতা ও বাস্তুচ্যুতি সহ্য করে চলেছেন। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অবনতিশীল নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতির মধ্যেও দৃঢ়তা দেখিয়ে চলেছেন তারা।

১১টি দেশের বিবৃতিতে বল হয়েছে, আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যারা রোহিঙ্গাদের, বিশেষ করে নতুন করে আসা লোকজনদেরও আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়ে চলেছেন এবং জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে চায় উল্লেখ করে বিবৃবিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এখনো সীমান্ত পেরিয়ে বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত রয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা রাখাইনে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন। মিয়ানমারে এখন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে না, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে ও স্থায়ীভাবে ফিরে যেতে পারেন।

যৌথ বিবৃতিতে ১১ দেশ বলেছে, এই শর্ত পূরণ করতে হলে বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলোর সমাধান প্রয়োজন, যার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার আবশ্যক। তাই আমরা স্বীকার করছি, এখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই, সব পক্ষের প্রতি একটি প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে তারা বলেছে, আমরা মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই। সহিংসতা বন্ধ এবং মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা অন্যায়ভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিও পুনর্ব্যক্ত করছি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যৌথ বিবৃতি দেওয়া দেশগুলো বলেছে, আমরা আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরও স্থায়ী সমাধানের পক্ষে। বিশেষ করে যখন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মানবিক সহায়তার তহবিল কমে আসছে, তেমন পরিস্থিতিতে তাদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলছি। আমরা কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীকেও সমর্থন দিয়ে যাব, যারা উদারভাবে শরণার্থীদের আতিথেয়তা জানাচ্ছেন।

বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, আমরা রোহিঙ্গাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরছি, যাতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতাবান হতে পারে এবং বাংলাদেশে অবস্থানকালে নিরাপদ, সম্মানজনক ও গঠনমূলক জীবন যাপন করতে পারে। আট বছর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে এখনো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের পাশে অটলভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা এই সংকটের মূল কারণগুলো সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x