নিক্কেই ফোরামের ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ মঙ্গলবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে জাপান যাচ্ছেন। এই সফরে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান,আজ রাত ২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর। তিনি জানান, সফরকালে অধ্যাপক ইউনূস জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সেদেশের ব্যবসায়ী ও সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যু, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা হবে। প্রেস সচিব আরও জানান, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সাতটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শফিকুল আলম জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরের সময় জাপানের পক্ষ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। যার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেটারি সহায়তা, ২৫০ মিলিয়ন রেলখাতের উন্নয়ন এবং ২৫০ মিলিয়ন ডলার অন্যান্য খাতের জন্য।
এই সফরে নিক্কেই ফোরামের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে ৩০ মে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সাতটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি দু’টি সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন।
শফিকুল আলম বলেন, জাপানে কীভাবে প্রশিক্ষিত জনবল পাঠানো যায়, বিষয়টি এবারের সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাবে। প্রধান উপদেষ্টা আপাতত ১ লাখ জনবল সেখানে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছেন। এর জন্য ভাষা প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কীভাবে ভাষা প্রশিক্ষণ দিয়ে জনবল পাঠানো যায়, সে বিষয়ে গভীর আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
বিনিয়োগ সম্পর্কিত বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, জাপান সফরে মহেশখালী-মাতারবাড়ি অঞ্চলের উন্নয়ন উদ্যোগ (এমআইডিআই) বাস্তবায়নের বিষয় হবে ড. ইউনূসের আলোচনার প্রধান বিষয়। জাপান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের জন্য কী কী সুবিধা দেয়া যায়, সে সব বিষয় তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে ৩০০-এর ওপরে জাপানি বিনিয়োগকারী উপস্থিত থাকবেন বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম।
এছাড়া ৩০ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে, সেখানে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টিও থাকবে। শফিকুল আলম বলেন, জাপান মাতারবাড়ি অঞ্চলে তাদের দ্বিতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা মহেশখালী-মাতারবাড়ী অঞ্চলকে সিঙ্গাপুরের মত উন্নত বন্দর এলাকায় রুপান্তর করতে চান।
জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টা বড় বড় কোম্পানিকে এই বন্দরে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাবেন। এর বাইরে তিনি জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাওয়ার্ড পাবেন বলে জানান প্রেস সচিব। আগামী ৩১ মে প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।