২২ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৯ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

রাষ্ট্রপতির ছবি থাকা না থাকা নিয়ে ব্যস্ত সরকার: রুমিন ফারহানা

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৯ এএম

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, রাষ্ট্রপতির ছবি থাকবে কি থাকবে না, সেটা নিয়ে সরকার যত ব্যস্ত, তার চেয়ে যদি বাংলাদেশের ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশনটা ঠিক করার দিকে সরকার মনোযোগী হতো, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে সরকার মনোযোগী হতো, তাহলে আমার মনে হয় দেশটা আরেকটু রাইট ট্র্যাকে যেত। বুধবার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামালের সঞ্চালনায় ‘অন্য মঞ্চে’র অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

রুমিন ফারহানা বলেন, গত এক বছরে রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ১৫ বছর যে বিভাজনের চাষ হয়েছে সেটাকে বন্ধ করা, ল অ্যান্ড অর্ডারকে স্থীতিশীল করা, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এদিকে মনোযোগ না দিয়ে সরকার অন্যান্য অনেক নিচে গিয়ে ছোট ছোট ব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছে। ধরুন, এই যে রাষ্ট্রপতির পোর্ট্রেট ব্যাপারটাই ধরুন।

এই পোর্ট্রেট সরানো কেন হলো, আমরা কেউ জানি না। আপনি জানেন না। আমি জানি না, রাজনৈতিক দলগুলো জানে কি না আমি জানি না। এই যে কেউ না জানলেও চুপে চুপে একটা মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হলো, এটার অর্থটা কী? যদি ‘নো পোর্ট্রেট’ নীতি নিয়ে থাকে তাহলে সেটা প্রজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের জানাও।

তাহলে কারো পোর্ট্রেট থাকবে না, ওয়েল, এনাফ। আর কোনো পলিটিক্যাল পার্টি যদি সেটাকে সাপোর্ট করে তাহলে আমি আশা করব সেই পলিটিক্যাল পার্টিও যখন ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যদি যায় তাহলে তারাও নো পোর্ট্রেট নীতি নেবে। ডেফিনেটলি আমরা সেটা আশা করব।

তিনি বলেন, আমরা এখন পিস মিল বেসিসে কাজ করছি। মানে যেটা সামনে আসছে ওটা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু সরকারের আসল যে গুরু দায়িত্বটা ছিল, ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল থেকে আজকে ২৫ সালের আগস্ট মাস অলমোস্ট শেষ হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেই আসল জায়গাগুলোতে আমরা হাত দিতে দেখলাম না। রাষ্ট্রপতির ছবি থাকবে কি থাকবে না, সেটা নিয়ে সরকার যত ব্যস্ত, তার চেয়ে যদি বাংলাদেশের ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশনটা ঠিক করার দিকে সরকার মনোযোগী হতো, যদি মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে সরকার মনোযোগী হতো, যদি একজন ভালো উপদেষ্টাকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব দেওয়া হতো। যদি নির্বাচন সামনে রেখে কিভাবে তারা রোডম্যাপ তৈরি করবে সেটা নিয়ে মানুষের সামনে একটা ক্লিয়ার পিকচার দিত। যদি রাজনৈতিক পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ব্যাপারে আরেকটু জোর দিত এবং যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যাপারে একটা ফয়সালা করতে পারত। তাহলে আমার মনে হয়, দেশটা আরেকটু বোধহয় রাইট ট্র্যাকে যেত।

তিনি আরও বলেন, আপনি যদি সাধারণ মানুষের দিকে কান পাতেন, যারা কোনো পলিটিক্স করে না, তারা কিন্তু ভীত এবং তারা বলেন, দ্রুত একটা পলিটিক্যাল গভর্মেন্ট আসুক। সেই গভর্মেন্ট যেমনই হোক ‘ইজ বেটার দেন আনইলেক্টেড গভর্মেন্ট’। আমরা তো দেখলাম, রাজনৈতিক নেতাদের শাসনও ৫৩ বছর দেখলাম, আবার আমরা অরাজনৈতিক বিশ্ববিখ্যাত অতি উচ্চশিক্ষিত মানুষের শাসনও এই এক বছরে দেখলাম। মানুষ তো তার কম্পেয়ার নিজেরা নিজেদেরটা করতে পারে।

রুমিন ফারহানা বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে কি না এটা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার অনেক কারণ আছে। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশা অপেক্ষা ও উচ্ছ্বাস আছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৭ বছর কোনো ভোট দিতে পারেনি। এত বছর পর একটা নির্বাচন হবে সেটার যে একটা আমেজ চারপাশে থাকার কথা, আমরা কিন্তু সেই আমেজ এখনো লক্ষ করছি না। যদিও ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টই বলেছেন যে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে। প্রথমে বলেছেন প্রথম দিকে, তারপরে বলেছেন, রমজানের আগেই নির্বাচন হবে। মানে মধ্যভাগের মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষ এই কথাটি বিশ্বাস করছে না।

তিনি বলেন, এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, কেন করছে না? করছে না তার অনেকগুলো কারণ আছে। আপনি জানেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া যেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দফায় দফায় বসছে। ঐকমত্যে পৌঁছবার চেষ্টা করছে। কিন্তু অনেকগুলো ব্যাপারে তারা যেমন একমত হয়েছে, আবার বেশ কিছু ব্যাপারে তাদের মধ্যে অনৈক্য খুব স্পষ্ট। এবং কোনো কোনো পলিটিক্যাল পার্টি যদি সেই অনৈক্যকে পুঁজি করে নির্বাচনটিকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে, সেখানে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি আরো খোলাখুলি বলি। ফর এক্সাম্পল, জামায়াত পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাইছে। এনসিপি এখনো নিবন্ধন পায়নি। অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই ঘোষণা করেছেন, এনসিপি তার দল। তার দল বলতে তিনি একটি দল তৈরি করতে বলেছেন ছাত্রদের, যার ফলশ্রুতিতে এনসিপি গঠিত হয়েছে। এবং এনসিপির সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে ঘনিষ্ঠতা সেটা এখন নতুন করে আর বলবার কিছু নাই। কিন্তু এনসিপির নিবন্ধন এখনো হয় নাই।

রুমিন ফারহানা বলেন, আবার জামায়াত চাইছে, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনটি কিভাবে হবে সেটা নিয়েও কিন্তু এখন পর্যন্ত খুব ঐকমত্যে আসা গেছে, এটি বলা যাবে না। আপনি যদি গ্রাউন্ড রিয়েলিটির কথা চিন্তা করেন, মাঠের পরিস্থিতির দিকে তাকান, আপনি দেখবেন, এমন এমন একটা দিন যায় না যেদিন কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ মবের মাধ্যমে কিংবা কোনো না কোনোভাবে মানে পলিটিক্যাল হত্যাকাণ্ড কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ব্যবসায়ীরা টাকা-পয়সার জন্য হত্যাকাণ্ড কোথাও না কোথাও হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটুকু স্মুথ হলে একটা নির্বাচন বাংলাদেশে হতে পারে আমি কখনোই আশা করব না, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ইংল্যান্ডের মতো বা ফিনল্যান্ডের মতো বা পশ্চিমের দেশগুলোর মতো হবে। তবে বাংলাদেশের মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন হওয়া উচিত তেমন না।

তিনি বলেন, আজকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ঢাকায় মব কিছুটা কমলেও যদিও উনি মবজাস্টিস শব্দটা বলেছেন, এই জাস্টিস শব্দটা নিয়ে আমার ভীষণ আপত্তি আছে। আমি জাস্টিস বলব না। এই মবের সহিংসতা ঢাকায় কিছুটা কমলেও ঢাকার আশপাশে এবং দেশের অন্যান্য জায়গায় মব কিন্তু চলমান আছে। মানুষের মধ্যে যে একটা ভীতি একটা আশঙ্কা এগুলো দূর হচ্ছে এবং নির্বাচন যত এগিয়ে আসতে থাকবে, তত কিন্তু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x