ইচ্ছার বিরুদ্ধে চুল কেটে দেয়া বা নির্দিষ্ট পোশাক পরতে বাধ্য করার ঘটনা থামছেই না। ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে চলছে ভিউ বাণিজ্যও। এসব ঘটনাকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলছেন সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা। আর ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছে, জোর করে চাপিয়ে দেয়া সমর্থন করে না ধর্ম। ময়মনসিংহের বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দকে পাগল ভেবে জোর করে মাথার চুল কেটে দেয়ার দৃশ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
পরে প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানান, হালিম উদ্দিন পাগল বা ভবঘুরে নন, সুফিবাদের নকশেবন্দীয়া তরিকার অনুসারী। হালিম সংসারবিরাগী নন, তার আছে সন্তান-সন্ততি। ঘটনার পর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হালিম উদ্দিন। তিনি বলেন, বাজারে গেলে আমাকে ঘেরাও করা হয়। জোর করে চেপে ধরে আমার চুল কেটে দেয়া হয়।
শুধু হালিম নন, বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবঘুরে, পথিক ও সন্ন্যাসীদের জোর করে চুল-দাঁড়ি কেটে দিয়ে গোসল করানোর ঘটনা ঘটছে। সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের কার্যক্রম মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, কিছু মানুষ কাউকে ধরে তার পোশাক পরিবর্তন করে দিচ্ছে বা তার চুল কেটে দিচ্ছে। মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে এ কাজগুলো যারা করছেন, সেটি স্পষ্টতই অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগীরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে মর্মাহত হচ্ছেন।
আর ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, জোর করে কারও চুল কেটে দেয়া ইসলাম সমর্থন করে না। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের সবাইকে সামনে না এনে, শুধু একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ট্যাগিংকে ইসলামোফেবিয়া বলছেন তারা। এ ছাড়া, ভবঘুরে বা মানসিক ভারসাম্যহীন কাউকে পুনর্বাসন করতে হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করার পরামর্শ তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, ‘রাস্তাঘাটে কাউকে পাওয়া গেলেই ধরে এনে চুল কেটে দিয়ে গোসল করিয়ে দিতে হবে– এমন কর্তৃত্ব রাষ্ট্রীয় আইন সমর্থন করে না, ইসলামও সমর্থন করে না। তবে, ওইসব ব্যক্তিদের দাঁড়ি-টুপি থাকলেই তাদেরকে ফোকাস করে বিষয়টি নেগেটিভভাবে তুলে ধরার প্রবণতাকে ইসলামোফেবিয়া আচরণ বলে মনে করি।