২৭ জুলাই মা ফাতেমা তুজ জোহরার যাওয়ার কথা ছিল লন্ডনে মেয়ের কাছে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস- এখন মেয়ে ফারহানা ফিরছেন মাকে শেষবারের মতো দেখতে। একটি ট্রেনের অপ্রতিরোধ্য গতিতে থেমে গেল সব অপেক্ষা ও প্রস্তুতি। এখন লন্ডনপ্রবাসী মেয়ের দেশে ফেরার অপেক্ষায় বাড়ির উঠোনে ফ্রিজার ভ্যানে রাখা হয়েছে ফাতেমা তুজ জোহরার (৬২) ও তার ছেলে হাফিজুল ইসলামের (৪২) মরদেহ।
সোমবার সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পাঠাননগর মিয়াজী বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। শনিবার সন্ধ্যায় ফেনী শহরের গোডাউন কোয়ার্টার রেলক্রসিং এলাকায় ট্রেনের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কা লেগে তাদের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ৩৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও নিহত মা-ছেলের নিথর দেহ বাড়ির উঠোনে ফ্রিজার ভ্যানে রাখা হয়েছে। কিছু সময় পর পর তাদের দেখতে আসছেন স্বজনরা। এসময় অনেকে প্রিয়জনদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
ছোট ছেলে রিয়াজুল ইসলাম মিয়াজী বলেন, ২০২১ সাল থেকে মা লন্ডনপ্রবাসী ছোট বোন ফারহানা আক্তার স্মৃতির সঙ্গে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন। এবার কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে তিনি দেশে এসেছিলেন। আগামী ২৭ জুলাই পুনরায় মায়ের লন্ডনে ফেরার কথা ছিল। সেজন্য শনিবার বড় ভাই হাফিজুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে করোনা পরীক্ষা করতে নোয়াখালীতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথেই ট্রেন দুর্ঘটনায় আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যায়। মা ও ভাইয়ের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবার শোকে স্তব্ধ।
পরিবার জানায়, শনিবার মা-ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে লন্ডন থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হন মেয়ে ফারহানা আক্তার স্মৃতি। আজ সোমবার (৩০ জুন) বাদ আসর স্থানীয় কাবিল ভূঁইয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করার কথা রয়েছে।
এর আগে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোডাউন কোয়ার্টার এলাকায় রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা যানজটে আটকে পড়ে। এসময় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাফিজুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তার মাকে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।