চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনালের পর এবার লালদিয়ার চরে হেভি লিফট কার্গো জেটি নির্মাণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের দায়িত্ব পেয়েছে নৌবাহিনী। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছে নৌবাহিনী।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হলেও এখানকার অধিকাংশ ইয়ার্ডে এখনো প্রতি বর্গফুট জায়গায় ৩ মেট্রিক টনের বেশি পণ্য ওঠানামার সক্ষমতা নেই। প্রতিটি ক্রেনের ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ১৫শ মেট্রিকটন। অথচ শিল্প কারখানা ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আমদানি হওয়া অনেক যন্ত্রপাতির ওজন বন্দরের বর্তমান সক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি।
প্রতি বছর প্রায় ৩২ লাখ কনটেইনার ও ১৩ কোটি মেট্রিক টন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করলেও এখানে ছিল না উচ্চ বহনক্ষমতার বিশেষায়িত ক্রেন। এমএসসি শিপিংয়ের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, এক্সক্লুসিভ জেটি না থাকায় বার্জ ভাড়া করা বা জাহাজ শিফট করতে হচ্ছে বারবার। এতে সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে খরচ।
অবশ্য প্রতি বর্গফুটে ৩ মেট্রিক টন সক্ষমতার একমাত্র ক্রেনটির অবস্থান এনসিটির ৫ নম্বর বার্থে হওয়ায় সেটি দিয়ে কনটেইনার ছাড়া অন্য পণ্য নামানো যায় না। আবার এ ধরনের পণ্য খালাস হয় জিসিবি বার্থে। এসব যন্ত্রপাতি জাহাজ থেকে নামাতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিপিং এজেন্ট এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে।
চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফজলে একরাম চৌধুরী জানান, জাহাজ একাধিকবার আনা-নেয়ার কারণে খরচ বহন করতে হয় বিপুল পরিমাণে। এর চাপ পড়ে জাহাজ মালিক ও এজেন্টদের ওপর। এ অবস্থায় হেভি লিফট কার্গো জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে টু-পয়েন্ট এলাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীর মধ্যে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেটাতেই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ডেলিগেটেড প্রজেক্ট হিসেবে নৌবাহিনীকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
লালদিয়ার চরে ৩০০ কোটি তাকার প্রকল্পের আওতায় ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি জেটি নির্মিত হবে, যেখানে ভিড়তে পারবে অন্তত ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ। নতুন ক্রেনের বহন ক্ষমতা হবে প্রতি বর্গফুটে ৫ মেট্রিক টন। ফলে সহজেই ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের ভারী যন্ত্রপাতি খালাস করা যাবে। আর্থিক স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার কারণেই মূলত প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নৌবাহিনীকে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং ২০২৭ সালের শুরুতেই অপারেশনে যাবে লালদিয়ার চর জেটি।