৭ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১:১৭ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

শাপলা প্রতীক বরাদ্দ প্রশ্নে ব্যাখ্যা দিল এনসিপি

প্রকাশ : ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১:১৭ এএম

শাপলা প্রতীক বরাদ্দ প্রশ্নে ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের বরাতে এ ব্যাখ্যা দেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ব্যাখায় তিনি লেখেন, এনসিপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময়, বৈঠক ও যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। এনসিপির প্রতিনিধিদল এপ্রিল থেকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া, নিবন্ধনের সময়সীমা, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।

এনসিপির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন বিবিধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮-এর সংশ্লিষ্ট বিধানে নতুন করে নির্বাচনি প্রতীক তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় প্রতীক যুক্ত করতে কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেন এবং বৈঠকে তিনি চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর গত ২২ জুন এনসিপি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক ১০ মার্চ প্রকাশিত ১৭.০০.০০০০.০২৫.৫০.০৯২.২৪-৪৯ নং স্মারকের গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়।

ব্যাখ্যায় বলা হয়, এনসিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের আপামর জনসাধারণ এনসিপির প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’-কে চিনতে শুরু করে এবং গণমানুষের সঙ্গে এনসিপির শাপলা প্রতীককেন্দ্রিক এক অভূতপূর্ব আত্মিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এছাড়াও ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এনসিপি দেশজুড়ে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে এবং কর্মসূচিতে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ এনসিপিকে আপন করে নেয় এবং স্বতস্ফূর্তভাবে খাল-বিল-জলাশয় থেকে শাপলা সংগ্রহ করে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এনসিপির প্রতীক হিসেবে শাপলাকে হৃদয় থেকে বরণ করে নেয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, হঠাৎ করে গত ৯ জুলাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে এনসিপি জানতে পারে যে, নির্বাচন কমিশন শাপলাকে নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে তপশিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ‘শাপলা’ জাতীয় প্রতীক হওয়ায় নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে এটি বিধিমালার তপশিলভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানায় নির্বাচন কমিশন। এরপর গত ১৩ জুলাই এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে এক বৈঠকে বসেন এবং বৈঠকের আলোচনায় এবং একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেয় যে, শাপলাকে জাতীয় প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত ব্যাখ্যা আইনানুগভাবে সঠিক নয় এবং এই বিষয়ে কমিশনের গৃহীত অবস্থানের আইনি ভিত্তি নেই।

ব্যাখ্যায় এনসিপি স্পষ্ট করে জানায়, বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(৩), দ্য বাংলাদেশ অ্যান্থেম, ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার ১৯৭২-এর ধারা ৪, বাংলাদেশ ন্যাশনাল এমব্লেম রুলস, ১৯৭২-এর বিধি ৩ এবং অন্যান্য বিদ্যমান আইন অনুসারে ‘শাপলা’ প্রতীক তপশিলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে আইনগত বাধা নেই। ১৯৭২ সালের অর্ডারের তৃতীয় তপশিল এবং ১৯৭২ সালের বিধিমালার পরিশিষ্ট-ক তে জাতীয় প্রতীকের নকশা অঙ্কিত আছে। ওই নকশা অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক হচ্ছে লালচে এবং হলুদ রঙের যুগল বৃত্তের ভেতরে লালচে এবং হলুদ রঙে অঙ্কিত পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল, দুপাশে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকা-এর সন্নিবেশ ও সামষ্টিক রূপ। অর্থাৎ জাতীয় প্রতীকের নকশা এবং রঙ ১৯৭২ সালের অর্ডারের তৃতীয় তপশিল ও বিধিমালার পরিশিষ্ট-ক দ্বারা সুনির্দিষ্ট। তাছাড়া জাতীয় প্রতীকের শাপলাটি পানিতে ভাসমান কিন্তু ‘ভাসমান শাপলা’ নামে কোনো প্রতীক তপশিলে অন্তর্ভুক্ত করার আয়োজন ছিল না। শাপলা জাতীয় প্রতীকের চারটি স্বতন্ত্র উপাদানের একটি মাত্র উপাদান।

ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বিএনপিকে জাতীয় প্রতীকের চারটি উপাদানের একটি উপাদান ‘ধানের শীষ’ বরাদ্দ দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলকে (জেএসডি) আরেকটি উপাদান ‘তারা’ প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে। সেহেতু নির্বাচন কমিশন ‘শাপলা’-কে প্রতীকের তালিকাভুক্ত করে রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে পারে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’-কে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে এবং তৃণমূল বিএনপি নামের আরেকটি দলকে ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। সুতরাং ‘শাপলা’ জাতীয় ফুল হলেও দলের প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে আইনগত কোনো বাধা নেই। ধানের শীষ, শাপলা, পাটপাতা এবং তারকা আলাদা আলাদা করে চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আর এই চারের সমষ্টিই হচ্ছে জাতীয় প্রতীক যা দুই রঙের দুটি বৃত্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত। জাতীয় প্রতীকের উপাদানের মধ্যে দুটি উপাদান ইতোমধ্যে দুটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দকৃত। সর্বোপরি, ‘শাপলা’-কে প্রতীকের তালিকায় তালিকাভুক্ত না করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ভুল আইনি ভিত্তি ও বোঝাপড়ার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

এনসিপি ব্যাখ্যায় বলছে, দলটির প্রতিনিধি দল দফায় দফায় কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে এবং কমিশনের কাছে থেকে ১৩ জুলাই তারিখের আবেদনের অগ্রগতি জানতে চাইলেও কমিশন ওই বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা ও অবস্থান স্পষ্ট করেনি। ১৩ জুলাইয়ের বৈঠকের পরবর্তী কোনো বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে শাপলা প্রতীক বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনি বাধার বিষয়টি আর উল্লেখ করা হয়নি এবং সংবাদমাধ্যমেও আইনি বাধার বিষয়ে কমিশন কোনো বক্তব্য প্রদান করেনি। অর্থাৎ শাপলাকে প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত নয় বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়।

ব্যখায় আরও বলা হয়, পরবর্তীতে এনসিপি গত ৩ আগস্ট কমিশনের কাছে চিঠির মাধ্যমের পার্টির অনুকূলে প্রতীক সংরক্ষণের ক্রম হিসেবে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা উল্লেখ করে এবং শাপলা প্রতীক হিসেবে দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে শাপলার ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন বা আংশিক ডিসটর্টেট ভার্সন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এনসিপি সবসময় আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানায়। একই দিনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিদল এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করে। সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে সব যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর এবং নিবন্ধনের সব শর্ত প্রতিপালন করার ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু গত ২৩ সেপ্টম্বর কমিশনের সিনিয়র সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকায় শাপলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং এ কারণে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। নির্বাচন কমিশনের এমন স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত এবং ওইরকম বক্তব্য অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের এমন একরোখা কার্যকলাপে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সব দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

আশাবাদ ব্যক্ত করে এনসিপির ব্যাখ্যায় বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে জাতীয় নাগরিক পার্টি’র অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আগে যেমন স্বেচ্ছাচারিতা করেছে ও একরোখা মনোভাব দেখিয়েছে তা ত্যাগ করবে এবং এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সব দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x