জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রোববার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করবে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বিচারকাজ এদিন সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এই প্রথম জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কোনো মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। শনিবার সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে মামুনের ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) আমির হোসেন। অন্যদিকে মামুনের পক্ষের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে এ মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ঠিক করা হয়। মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও জাতীয় দৈনিকের এক সম্পাদকসহ ৮১ জন।
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৪ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে প্রথম শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। তার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশদান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট ৫ অভিযোগ আনা হয়েছে।
পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া-সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ড এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর পর প্রসিকিউশন বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ দাখিলের ৬ মাস ২৮ দিন পর তদন্ত শেষে গত ১২ মে এ মামলার প্রতিবেদন তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। গত ১ জুন এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে পলাতক দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। হাজির না হওয়ায় শেখ হাসিনা অনুপস্থিতিতে রোববার শুরু হচ্ছে বিচার কার্যক্রম।