প্রথাবিরোধী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আরিফ জেবতিক তার সর্বসাম্প্রতিক পোস্টে দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা বা না-থাকা নিয়ে কথা বলেছেন। তবে আগের পোস্টে শুধু বিএনপি বাদে বাকি সব দল যেমন এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে একমত হয়েছে যে দুবারের বেশি মেয়াদে কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এর পরই নির্বাচন বিষয়ে আজ তিনি আরো একটি পোস্ট করেছেন।
এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক পোস্টে আরিফ জেবতিক সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থাটা আইডিয়া দিয়েছেন আর বলেছেন এই আইডিয়ার ব্যাপারটা হবে ম্যাজিক রিয়েলিজম! ফেসবুকে শেয়ার করা পোস্টটি সারাবেলার খবরের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হয়েছে। আরিফ জেবতিক তার পোস্টে লেখেন,
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থাটা আইডিয়া হিসেবে খুব সুন্দর। সারাদেশের সকল মানুষের প্রতিনিধিত্ব আইনসভায় নিশ্চিত করা যায়। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় একতরফা প্রতিনিধিত্ব হয়। ধরা যাক, মাত্র দুটো দল ইলেকশন করছে। একটি দল প্রতিটি আসনে মাত্র ১টি করে ভোট বেশি পেল। তাহলে ৩০০ আসনে মোট মাত্র ৩০০টি ভোট বেশি পেয়ে দেশের সর্বেসর্বা মালিক হয়ে যাবে দলটি, দ্বিতীয় দলটি সংসদে যেতেই পারবে না। কিন্তু এতে করে বাকি মোটামুটি সমান সংখ্যক মানুষের প্রতিনিধিত্ব হবে শূন্য। সংখ্যানুপাতে নির্বাচন হলে একই ভোটের হিসাবে একটি দল ১৫১ আসন পেত, আরেকটি দল পেত ১৪৯ । সকল জনসাধারনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হতো, এবং একটি ব্যালেন্স সরকার পাওয়া যেত।

তো, এটি হলো আইডিয়াল জায়গা থেকে যুক্তি। এখন এটির সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। বাংলাদেশে তাহলে মার্কার নামে ভোট হবে। কারন সারাদেশের সব ভোট কাউন্ট করার পর সেটিকে পার্সেন্টেজ ধরে ৩০০ আসনে বরাদ্দ দেয়া হবে।
প্রথম সমস্যা হচ্ছে তাহলে এলাকাভিত্তিক কোন প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। ধরাযাক, একই সিনারিওতে ক দল ১৫১টি আসন পেয়েছে, খ দল পেয়েছে ১৪৯। এখন ঢাকা-১৭ আসনটি কাকে বরাদ্দ দেয়া হবে, ১৫১ আসনের মালিককে নাকি ১৪৯কে? সুতরাং এলাকা ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব বিলোপ হয়ে যাবে। এখন নমিনেশের ব্যাপারে একটা চেক-ব্যালেন্স থাকে। এলাকার জনপ্রিয়তম নেতাকে নমিনেশন দেয়ার চেষ্টা করে দলগুলো। অগামগাকে দাঁড় করিয়ে দিলে তো আর ভোটে জিততে পারবে না। কিন্তু সংখ্যানুপাত ইলেকশনে স্থানীয় নেতাদের কোনো গুরুত্ব থাকবে না। ভোট হবে দেশজুড়ে মার্কার জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে। এতে করে সংসদ সদস্যদের জন্য আর জনসাধারনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কোন সুযোগ থাকবে না, প্রয়োজন পড়বে না এবং তাহলে জনসাধারনের চিন্তাভাবনা সংসদে প্রতিফলিতও হবে না।
আর ভয়ংকর ব্যাপারটা ঘটবে যে আসন কেনাবেচার বিষয়। যে কোন দল যেহেতু আগে থেকেই আসন নিশ্চিত হয়ে যাবে, কে সরকারে যাচ্ছে সেটা পরিস্কার হয়ে যাবে, তখন এই নিশ্চিত আসনগুলো তারা উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে থাকবে। নীতি আদর্শের কোন ব্যাপার থাকবে না। ধরা যাক একটি ছোট দল সারাদেশে ২% ভোট পেয়ে ৬টি আসনের মালিক হয়েছে। তাঁরা নিজেরা হয়তো ৩টি আসন রেখে বাকি ৩টি বিক্রি করে দেবে।
যে দল সরকারে যাবে, সে দল তো বিক্রি করবেই। ধরা যাক একটি দল ৬০% ভোট পেয়েছে, সুতরাং তাঁরা এখন সরকারে যাবে। তাঁরা ১৮০টি আসন বরাদ্দ পেয়েছে। এবার বড় একটা কোম্পানির মালিক, যে ডার্টি জনগনের কাছে যাবে বলে ভোটটোট করতে রাজি না, সে গিয়ে বলবে, তোমার এখান থেকে আমাকে ৫টি এমপি দিয়ে দাও। এই নাও ৫০০ কোটি টাকা। তারপর সে, তার বউ, তার পোলা মাইয়া দুটি আর কাজের বুয়া; এই ৫জনই এমপি হয়ে যাবে।
কী একটা ম্যাজিক রিয়েলিজম হবে ব্যাপারটা!