২৭ জুলাই ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭:০১ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সংবিধানে নয়, বাস্তবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চায় বিএনপি

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭:০১ পিএম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা শুধু সংবিধানে উল্লেখ থাকলেই যথেষ্ট নয়, তার কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে উপযুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৮তম দিন শেষে এ কথা বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা অতীতে বলে এসেছি যে, প্রতিটি সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য সংবিধানে আলাদা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া না এনে, সংশ্লিষ্ট আইনের মাধ্যমে সেই সব প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আচরণবিধি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি সংবিধানে আলাদা করে উল্লেখ করা যায়—এই ক্ষেত্রে আমরা একমত।

তিনি জানান, সংলাপে সব পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সিলেকশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে। এই কমিটিতে থাকবেন—জাতীয় সংসদের স্পিকার (সভাপতি), বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন আপিল বিভাগের বিচারপতি।

এই কমিটি নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে একটি অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে, যেখানে সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণ নাম জমা দিতে পারবে। সংসদে একটি আইন প্রণয়ন করে এই অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটির কাঠামো নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সার্চ কমিটি জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে এবং সেটি সিলেকশন কমিটির কাছে পাঠাবে। কমিটি চাইলে এই তালিকা থেকে অথবা নিজেরা আরও প্রার্থী বিবেচনায় নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

তিনি উল্লেখ করেন, কমিশন গঠনে আগে যে প্রস্তাবে প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে নাম সুপারিশ করার কথা ছিল, বর্তমান প্রস্তাবে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিটি পদের জন্য একটি করে নাম রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। নিয়োগের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। এছাড়া সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের উপধারায় একটি নতুন সংযোজনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করবে এবং তাদের জন্য আচরণবিধি নির্ধারণ করবে।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিশন চাই, যারা কার্যত স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তাই তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কার্যক্রম পর্যন্ত সবখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, একাধিকবার নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, কিন্তু কার্যত তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধভাবে সে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এখন শুধু আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া বাকি। আমরা ধরে নিচ্ছি, পরবর্তী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে।

সেই বিবেচনায় একটি কার্যকর, স্বাধীন এবং জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন কমিশন গঠনে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গঠিত ঐক্যকে তিনি স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই গঠন প্রক্রিয়া এবং কমিশনের ভবিষ্যৎ কাজের দিক নির্দেশনা নির্ধারণে যে সর্বসম্মত প্রস্তাব এসেছে, তা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তি তৈরি করবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x