১ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ৯:০৬ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সংখ্যানুপাতিক ভোটে মনোনীত

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ৯:০৬ পিএম

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জাতীয় সংসদের কাঠামোতে একটি উচ্চকক্ষ যুক্ত হবে এবং সেটি হবে ১০০ আসনের। এই উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন না, বরং জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে মনোনীত হবেন। অর্থাৎ, দলগুলোর ভোটের ভিত্তিতে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে এই আসন বণ্টন করা হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ২৩তম দিনের আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এটি ছিল আলোচনার শেষ দিন। দিনের শুরুতেই কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, আজকের মধ্যেই আলোচনা পর্ব শেষ করে দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করার চেষ্টা করা হবে। সেই সনদের ভিত্তিতে একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

এই উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব এবং সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা দেয়। বিএনপি এবং তাদের মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, এনডিএম ও এলডিপি প্রস্তাবিত পদ্ধতির বিরোধিতা করে। তাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনে যে দল যত আসন পেয়েছে, সেই অনুপাতে উচ্চকক্ষে সদস্য মনোনীত হওয়া উচিত। শুধুমাত্র ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টন অযৌক্তিক এবং এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে তারা মন্তব্য করে।

এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ একাধিক দল কমিশনের প্রস্তাবিত সংখ্যানুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতির পক্ষে মত দেয়। দীর্ঘ আলোচনার পর বিষয়টি কমিশনের ওপর ছেড়ে দিলে, কমিশন ভোটের ভিত্তিতেই উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনয়ন চূড়ান্ত করে।

কমিশনের প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, উচ্চকক্ষে নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। তবে অর্থবিল ব্যতীত অন্যান্য সব প্রস্তাবিত আইন প্রথমে উপস্থাপন করতে হবে নিম্নকক্ষে এবং তারপর উচ্চকক্ষে। উচ্চকক্ষ কোনো আইন প্রস্তাব স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না। এক মাসের মধ্যে যদি বিলটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তাহলে সেটিকে উচ্চকক্ষে অনুমোদিত হিসেবে গণ্য করা হবে। আর যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তবে সেটি সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠানো হবে। এরপর নিম্নকক্ষ সংশোধন গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখবে।

তবে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এসব দলের যুক্তি, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় একটি উচ্চকক্ষ গঠনের প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং এটি ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর একটি ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে।

আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং আইয়ুব মিয়া।

আলোচনার শেষে জানানো হয়, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে, তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত সংশ্লিষ্ট দলের কাছে পাঠানো হবে। চূড়ান্ত সনদ তৈরির কাজ শুরু হবে অবিলম্বে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x