৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:১৬ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সংসদ নির্বাচনের সীমানা চূড়ান্ত, ৩৭ আসনে পরিবর্তন

প্রকাশ : ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:১৬ এএম

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানার পুনঃনির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার রাতে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৩৭টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব কমপক্ষে ৪৬টি আসনের উপর পড়েছে।

ঢাকার নির্বাচনি এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে ছয়টি আসনে। ঢাকার মধ্যে ঢাকা-২, ৪, ৫, ৭, ১০ ও ১৪ আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। ঢাকা-২ আসনের মধ্যে কেরাণীগঞ্জ উপজেলার তাড়ানগর, কালাতিয়া, হজরতপুর, রুহিতপুর, শাক্তা, কালিন্দি ও ভাস্তা ইউনিয়ন এবং সাভার উপজেলার আমীনবাজার, তেতুলজোড়া, ভার্কুতা ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা-৪ আসনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৭, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ এবং ৫৮ থেকে ৬১ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঢাকা-৫ আসনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬২ থেকে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ঢাকা-৭ আসনের সীমানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৩ থেকে ৩৩ এবং ৩৫, ৩৬, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা-১০ আসনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৪ থেকে ১৮ এবং ২২ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঢাকা-১৪ আসনের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটির ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়নকে রাখা হয়েছে।

ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের সাভার থানার বিরুলিয়া এবং বনগাঁও ইউনিয়নকে ঢাকা-২ (কেরাণীগঞ্জ) আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। আপত্তি পর্যায়ে ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় উপজেলাকে দুইটি আসনে বিভক্ত করা বা সম্ভব না হলে সম্পূর্ণ সাভার উপজেলাকে একটি আসনে রাখা দাবিও উঠে। চূড়ান্ত তালিকায় বিরুলিয়া ইউনিয়নকে সাভার আসনের সঙ্গে ফেরত রাখা হলেও বনগাঁওকে ঢাকা-১৪ আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

দোহার ও নবাবগঞ্জ আসন পুনরুদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক মো. হুমায়ূন কবীর জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রথম দফায় ৬ হাজারের বেশি এবং দ্বিতীয় দফায় ১১ হাজার মানুষের স্বাক্ষরসহ দোহার উপজেলা ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে পুনঃনির্ধারিত সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধারের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।

বাগেরহাটে আসন সংখ্যা ৪ টি থেকে কমিয়ে ৩টি করা হয়েছে। বর্তমানে বাগেরহাট-১ আসনের মধ্যে বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলা, বাগেরহাট-২-এর মধ্যে ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা উপজেলা এবং বাগেরহাট-৩-এর মধ্যে কচুয়া, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা রাখা হয়েছে। এর আগে বাগেরহাট-১, ২, ৩ ও ৪ হিসেবে চারটি আসন ছিল।

গাজীপুর অঞ্চলে পাঁচটি আসন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ছয়টি করা হয়েছে। গাজীপুর-১-এর মধ্যে কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটির ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গাজীপুর-২-এর মধ্যে গাজীপুর সিটির ১ থেকে ৬ ও ১৩ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গাজীপুর-৩-এর মধ্যে শ্রীপুর উপজেলা, গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সেনানিবাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গাজীপুর-৫-এর মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলা এবং গাজীপুর সিটির ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড রাখা হয়েছে। গাজীপুর-৬-এর মধ্যে গাজীপুর সিটির ৩২ থেকে ৩৯ এবং ৪৩ থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা), নারায়ণগঞ্জ-৪ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা, এনায়েতপুর, বক্তাবলী, কাশিপুর, কুতুবপুর, গোগনগর ও আলিরটেক এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ নারায়ণগঞ্জ সিটির ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং বন্দর উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জ-২-এর মধ্যে সিঙ্গাইর, হরিরামপুর উপজেলা এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া ও ভাড়াটিয়া ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত এবং মানিকগঞ্জ-৩-এর মধ্যে হাটিপাড়া ও ভাড়াটিয়া ইউনিয়ন ব্যতীত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা এবং সাটুরিয়া উপজেলা রাখা হয়েছে।

অন্যান্য জেলার যেসব আসনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে, এরমধ্যে রয়েছে- পঞ্চগড়-১ ও ২, রংপুর-১ ও ৩, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, পাবনা-১ ও ২, সাতক্ষীরা-২, ৩ ও ৪, ফরিদপুর-২ ও ৪, শরিয়তপুর-২ ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩, কুমিল্লা-১, ২, ৬ ও ১০, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫ এবং চট্টগ্রাম-৭ ও ৮।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিশেষায়িত কমিটি কাজ করেছে। ৩০ জুলাই ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হয়। দ্বাদশ সংসদের ২৬১ আসনের সীমানা বহাল রেখে ৩৯টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনা হয়। সংসদীয় এলাকার সীমানা নিয়ে দাবী-আপত্তি জানাতে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল।

গত ২৭ আগস্ট চারদিনে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ১ হাজার ৮৯৩টি দাবি-আপত্তির শুনানি গ্রহণ করা হয়। ৩৩ জেলার ৮৪টি আসন সম্পর্কিত ১ হাজার ১৮৫টি আপত্তি এবং ৭০৮টি পরামর্শ বা সুপারিশ পক্ষে রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা অনুসারে দেশের সকল নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারিত হয়েছে, যা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গণ্য হবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x