১৭ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ২ মে ২০২৫, ১০:২৩ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান গাজা

প্রকাশ : ২ মে ২০২৫, ১০:২৩ পিএম

👁 19 views

২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। সদ্য প্রকাশিত এই রিপোর্টে উঠে এসেছে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাওয়ার চিত্র। সংগঠনটি জানিয়েছে, সাংবাদিকদের জন্য বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা।

শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম ১৮ মাসেই ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রায় ২০০ সাংবাদিক নিহত হন। এর মধ্যে অন্তত ৪২ জন পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সরাসরি আক্রমণের শিকার হন। গাজায় সাংবাদিকরা বেশির ভাগই আশ্রয়হীন, এমনকি জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানিরও অভাব রয়েছে উপত্যকাটিতে।

পশ্চিম তীরেও গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। সেখানে সাংবাদিকরা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে অতর্কিত হামলার পর সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইসরায়েলিদের এসব অপরাধের কোনো বিচার হয় না।

বিপদ শুধু বাইরের দিক থেকে নয়। ইসরায়েলের সঙ্গে যোগসাজশের সন্দেহে হামাস ও ইসলামিক জিহাদও সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিচ্ছে। আর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গৃহীত নতুন ‘সাইবার অপরাধ আইন’ মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমিত করছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স।

সব মিলিয়ে সর্বশেষ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ফিলিস্তিনের অবস্থান ২০২৪ সালের তুলনায় ছয় ধাপ পিছিয়ে গিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৩তম স্থানে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ১১২টি দেশের অবস্থান আরও খারাপ হয়েছে এবং গড় স্কোর সর্বনিম্ন ৫৫ পয়েন্টে নেমে গেছে।

চলতি বছর গাজায় প্রাণ হারানো আলোচিত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসসুনা। তাঁর ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হওয়ার খবর জানার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন তিনি। এ ছাড়া সম্প্রতি গুলিবিদ্ধ হয়ে কোমায় চলে গেছেন আলজাজিরার এক সাংবাদিক।

গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানিয়েছে, গাজায় নিহত সাংবাদিকদের সংখ্যা আধুনিক ইতিহাসে যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিক নিহতের সবচেয়ে বড় রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জাতিসংঘ বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস-এ দেওয়া বার্তায় জানিয়েছে, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা সাংবাদিকদের জন্য মৃত্যুকূপ হয়ে উঠেছে। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, সংবাদ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। জাতিসংঘ এবং সাংবাদিক অধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাংবাদিক হত্যার আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে পিছিয়েছে ইসরায়েলও। ১১ ধাপ পিছিয়ে নতুন প্রকাশিত তালিকার ১১২তম অবস্থানে নেমেছে তারা। রিপোর্টে বলা হয়, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর দেশটিতে সংবাদমাধ্যমের বহুমত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সম্পাদকীয় নিরপেক্ষতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ২০২১ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শুধু তাঁকে সমর্থন করে যাওয়া চ্যানেল ফোরটিনকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন এবং ইসরায়েলি মূলধারার অন্যান্য সংবাদমাধ্যমকে ষড়যন্ত্রকারী বলে দোষারোপ করছেন।

২০২৪ সালে দেশটির তথ্যমন্ত্রী খোলাখুলিভাবে সমালোচনামূলক দৈনিক পত্রিকা হারেৎজ বর্জনের আহ্বান জানান, কারণ পত্রিকাটি তখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বেসামরিক নাগরিক হত্যার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x