১৭ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ৩ মে ২০২৫, ১১:১০ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

‘সাগর-রুনির হত্যাকারী দুই জন, তবে শনাক্ত করা যাচ্ছে না’

প্রকাশ : ৩ মে ২০২৫, ১১:১০ পিএম

👁 57 views

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি অফিসিয়াল বা পেশাগত কোনো কারণে খুন হননি। তাদের হত্যায় অংশ অংশ নেয় দুজন, তবে ডিএনএ অস্পষ্টটায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি। হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর পর গঠিত টাক্সফোর্সের তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। গত ২২ এপ্রিল উচ্চ আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেয় টাস্কফোর্স।

আজ (৩ মে) দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরে সম্প্রচারিত একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটে সাগর-রুনি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। বিভিন্ন সময় আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পালন করে পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব। সর্বশেষ গগ নভেম্বরে পিবিআইয়ের হাতে পড়ে এর তদন্তবার। কিন্তু শতাধিকবার সময় নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কোনো সংস্থা।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এ হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তভার পড়ে টাস্কফোর্সের ওপর। তারা নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। টাক্সফোর্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে খুনের তথ্য পায়নি টাস্কফোর্স। ভিসেরা রিপোর্টেও চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি।

তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সাগর-রুনি দুজনই রাতে বাসায় ফেরেন। খুন হন রাত তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। তবে তাদের বাসায় ফেরার আগে থেকে সেখানে কেউ ছিল না, কিংবা জোর করে কেউ বাসায় ঢোকেনি। রান্নাঘরের বারান্দায় সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চির ভাঙা অংশটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন। তা দিয়ে সহজে মানুষ ঢুকতে ও বের হতে পারে। যদিও সেখানকার পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।

হত্যাকাণ্ডে দুই জন অংশ নেয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা রান্নাঘরে থাকা ছুরি ও বটি দিয়ে সাংবাদিক দম্পতিকে খুন করে। তবে ক্ষত নিয়ে অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন সাগর-রুনি।

ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনিকে। সাগর বাধা দিতে পারেন- এমন ধারণায় তার হাত-পা বাঁধা হয়। ব্ল্যাড পেটার্ন পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনি। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।

সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স । কিন্তু হত্যাকারী শনাক্ত করা যায়নি। এর কারণ হিসেবে ডিএনও অস্পষ্টতার কথা বলা হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, একসঙ্গে দুই বা তিনজনের ডিএনএ থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। সংখ্যায় এর বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনাস্থলে চারজনের ডিএনএ পাওয়া যায়। তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের দুজন সাগর-রুনি, অন্য দুজনের ডিএনএ শনাক্ত করতে পারেনি টাস্কফোর্স। তাই হত্যার মোটিভ ও খুনে কারা জড়িত সে বিষয়টিও সুনির্দিষ্ট করা যায়নি।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। এর আগে গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের পায়ের ছাপে ধ্বংস হয়ে যায় আলামত।

বিভিন্ন মাধ্যমে সন্দেহ করা হয় যে পেশাগত কিংবা অফিসিয়াল কারণে খুন হন সাগর রুনি। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুনির অফিসিয়াল নথি ঘেঁটে তার সঙ্গে কারও শত্রুতার প্রমাণ পায়নি টাস্কফোর্স। আলোচিত বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড নিয়ে রিপোর্টের জেরে এ হত্যারও কোনো তথ্য মেলেনি। সাগরের মালিকানাধীন এনার্জি বাংলা ডটকমে কোনো সংবাদের জেরে কিংবা পেশাগত কারণেও এই হত্যাকাণ্ড ঘটার যোগসূত্র মেলেনি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টিভির তখনকার বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার এবং এটিএন বাংলার রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। সেদিন একমাত্র ছেলে মেঘকে মাঝে রেখে শুয়ে ছিলেন তারা। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x