২০ জুন ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫, ১:৫৬ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাত মাসে ২৫ বিয়ে করে লাখ লাখ টাকা ও স্বর্ণ লুট করলেন তরুণী

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫, ১:৫৬ এএম

👁 3 views

বাস্তব যেন হার মানালো সিনেমাকে। ২৩ বছরের এক তরুণী সাত মাসে ২৫টি বিয়ে করেছে। প্রতিবারই বর ও তাঁর পরিবারের বিশ্বাস অর্জন করে লাখ টাকার গয়না ও নগদ অর্থসহ উধাও হয়ে যেত। সে কোন রূপকথার রাজকন্যা নয়, তাকে বলা হচ্ছে সত্যিকারের ‘লুটেরি দুলহান’।

২০১৫ সালের বলিউড সিনেমা ‘ডলি কি ডোলি’ বেশ হিট করেছিল। সেখানে সোনম কাপুর অভিনয় করেছেন এক চটকদার চরিত্রে, যে একের পর এক ছেলেকে বিয়ে করে এবং বিয়ের রাতেই পালিয়ে যায় গয়নাগাটি ও নগদ অর্থ নিয়ে। সিনেমার সেই কাহিনী অনেককেই বেশ হাসিয়েছিল, কেউ আবার অবিশ্বাসও করেছে। আসলে এমনও কি সম্ভব! কিন্তু সম্প্রতি সেই সিনেমার গল্পকেই যেন হার মানাল বাস্তব। ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে এমনই চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।

২৩ বছর বয়সী অনুরাধা পাসওয়ান নামের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুরের এক পুলিশ। তাকে ধরা হয় ভোপাল শহর থেকে। অভিযোগ উঠেছে, সাত মাসে ২৫ জন পুরুষকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে প্রতিবার লক্ষাধিক টাকার গয়না ও অর্থ লুট করেছে এই সত্যিকারের ‘লুটেরী দুলহান’। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।

কীভাবে ঘটেছে এই প্রতারণা
অনুরাধা পাসওয়ানের প্রতারণার কৌশল ছিল একেবারেই ছকবাঁধা। কিন্তু এতটাই নিখুঁত যে কারও এ বিষয়ে কোন সন্দেহ জাগেনি। প্রতিবার সে নতুন এলাকায় গিয়ে নতুন পরিচয় ব্যবহার করত। নাম বদলানো, আচার-আচরণে পরিবর্তন আনা, এমনকি সাজগোজে ভিন্নতা এনে নিজেকে উপস্থাপন করত এক ‘আদর্শ পাত্রী’ হিসেবে। সে মিষ্টভাষী ও নম্র ব্যবহার, ঘরোয়া সাজে আত্মীয়স্বজনের সুপারিশসহ হাজির হয়ে পাত্রপক্ষের বিশ্বাস অর্জন করত অনায়াসেই। পরিবারগুলো তাকে মেয়ের মতো আপন করে নিত, কারণ সে কখনও “কাজকর্ম জানি”, কখনও “অভাবের মধ্যে মানুষ হয়েছি” বলে সহানুভূতি আদায় করত।

সে বিয়ের দিন সবার মন জয় করে মঞ্চে হাসিমুখে ছবি তুলত, তবে রাতে ঘটত এর নাটকীয় মোড়। হঠাৎ গায়েব হয়ে যেত সে। সঙ্গে নিয়ে যেত বরপক্ষের দেওয়া সব গয়না, নগদ অর্থ, কখনও কখনও মোবাইল ফোন বা অন্যান্য দামি সামগ্রী। কেউ কেউ সকালে ঘুম ভেঙে দেখেছেন পাত্রী নেই, বিয়ের সাজগোজও নেই। অন্যদিকে, এতবার নাম, সাজ-পোশাক বদলে ফেলায় কোনো জায়গায় তার আসল পরিচয় কেউ জানতেই পারেনি। অনেক সময় সে বলত, সে এতিম, আবার কোথাও বলত, তাঁর পরিবারের কেউ নেই, এভাবে তিনি করুণ কাহিনী শুনিয়ে সহানুভূতি আদায় করত সবার থেকে। এই কৌশল ফলো করেই তিনি পরপর ২৫ জন পুরুষকে ঠকিয়ে গেছে। অবশেষে ধৈর্যের পরীক্ষায় জয়ী হয় পুলিশ।

একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ জমা পড়ার পর, তদন্তকারীরা পুরো বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। প্রতারণার ধরন বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন, এটি কোনো একক ঘটনার ফল নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত চক্রের কাজ। তখনই কৌশলে একটি ফাঁদ পাতে পুলিশ। ব্যবহার করা হয় আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং, লোকেশন হিস্টরি ও সিসিটিভি ফুটেজ। একপর্যায়ে চিহ্নিত করা হয় অনুরাধার অবস্থান। সেটি ছিল মধ্যপ্রদেশের ভোপাল শহরে।

সেখানেই আত্মগোপনে ছিল সে, হয়তো আবারও নতুন কোনো বিয়ের পরিকল্পনা করছিল সেখানে। তবে এত পরিকল্পনা করেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সঠিক সময়ে অভিযান চালিয়ে রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেন। ধরা পড়ার সময়েও অনুরাধা প্রথমে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে, কিন্তু পুলিশ যখন একে একে তার প্রতারণার সমস্ত তথ্য ও প্রমাণ তুলে ধরে, তখন নীরব হয়ে যাইয় এই ‘লুটেরী দুলহান’।

সোনম কাপুরের চরিত্র থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই এই প্রতারণা
সিনেমা আর বাস্তব জীবনের মাঝে সাধারণত একটা বড় ফারাক থাকে। কিন্তু অনুরাধা পাসওয়ানের এই প্রতারণার কাহিনী যেন হুবহু মিল খুঁজে পেয়েছে ২০১৫ সালের বলিউড সিনেমা ‘ডলি কি ডোলি’ তে সোনম কাপুরের চরিত্রের সঙ্গে। সিনেমায় যেমন ‘ডলি’ একের পর এক বিয়ে করে পালিয়ে যেত, বাস্তবেও অনুরাধা একই কৌশলে একাধিক পুরুষকে প্রতারণার জালে ফেলেছেন। তবে এখানে পার্থক্য একটাই, সিনেমার গল্পে হাস্যরস ছিল, বাস্তবের কাহিনীতে রয়েছে গভীর ক্ষত।

এ কাজে অনুরাধাকে সাহায্য করত তার নিজের স্বামীই
প্রতিটি ঘটনায় বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে, ভেঙে পড়েছে অনেক পরিবার, হারিয়েছে অর্থসম্পদ। অনুরাধার মিষ্টি ব্যবহার, চতুর অভিনয় আর পরিকল্পিত কৌশলের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সমাজের সাধারণ ও সৎ মানুষ।

এই চাঞ্চল্যকর কাহিনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতারণা আজকাল কতটা অভিনব ও কৌশলী হয়ে উঠেছে। এ কাজে অনুরাধাকে সাহায্য করত তার নিজের স্বামীই। একদিকে যেমন বাস্তব জীবনের ‘ডলি’ আমাদের অবাক করে, অন্যদিকে তেমনি এখানে প্রশ্ন তোলে, বিশ্বাস, সামাজিক বন্ধন ও বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্ক কি আজ শুধুই দুর্বল সুযোগের শিকার হচ্ছে না তো? অনুরাধা পাসওয়ানের গ্রেপ্তার হয়তো এই গল্পের শেষ অধ্যায়, কিন্তু তার এই প্রতারণার গল্প বলছে, এখন সময় এসেছে সতর্ক হওয়ারর আর সেই সঙ্গে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আরও যত্নবান হওয়ার।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x