তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। তাই দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিলো বাংলাদেশের জন্য সিরিজে ফেরার লড়াই। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে হৃদয়-ইমনের ফিফটিতে ২৪৮ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে তানভীর ইসলামের ঘূর্ণিতে ৭ বল বাকি থাকতে ২৩২ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। ১৬ রানের জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরালো বাংলাদেশ।
শনিবার (৫ জুলাই) কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। শুরুর ধাক্কা সামলে ফিফটি তুলে নেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। এরপর ফিফটি তুলে নেন তাওহীদ হৃদয়ও। শেষ দিকে তানজিম হাসান সাকিবের ৩৩ রানের ক্যামিওতে ২৪৮ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের শুরুটাও ভালো হয়নি। স্কোরবোর্ডে ৬ রান জমা হতেই পাথুম নিশাঙ্কার উইকেট হারায় লঙ্কানরা। প্রথম ব্রেক থ্রো-টা এনে দেন তানজিম সাকিব। লঙ্কান এই ওপেনারকে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে ফেলেন তিনি। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন কুশাল মেন্ডিস। ৩১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে ফেলেন তানভীর ইসলাম। তার আগে ওপেনার মাদুশকার উইকেটও তুলে নেন এই স্পিনার।
চারিথ আসালাঙ্কাকে ফেরান শামীম হোসেন পাটওয়ারী। তানভীর ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৭ বলে ৬ রান করা এই ব্যাটার। কামিন্দু মেন্ডিস থিতু হয়েও তার ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৫১ বলে ৩৩ রান।
দুনিথ ভেল্লালাগে সাজঘরে ফেরেন ১ রান করে। জাকের আলীর ক্যাচ বানিয়ে তাকে ফেরান তানভীর ইসলাম। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ১৩ রান। মহেশ থিকশানা আউট হন ১২ বলে ২ রান করে। তানভীরের বলে বদলি নামা রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার।
১৭০ রানে ৮ উইকেট হারালে হারের শঙ্কা জেঁকে বসে লঙ্কান শিবিরে। তবে লিয়ানাগের ব্যাটে সেই শঙ্কা যেনো উড়ে যায়। একাই খেললেন ৭৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। জয় থেকে যখন মাত্র ২১ রান দূরে শ্রীলঙ্কা, ঠিক সেই সময় লিয়ানাগের উইকেট তুলে নিয়ে টাইগার শিবিরে স্বস্তি ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি সফরকারীদের। স্কোরবোর্ডে ১০ রান যোগ হতেই তানজিদ হাসান তামিমের উইকেটের হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন পারভেজ হোসেন ইমন। দুজনে মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৬৩ রান। আসালাঙ্কার বলে থিকসানার হাতে ক্যাচ দিয়ে শান্ত আউট হলে ভাঙে তাদের এই জুটি।
এরপর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে এগোতে থাকেন ইমন। তবে হাসারঙ্গার বলে ইমন বোল্ড আউট ফিরলে ভাঙে তাদের ৩৭ রানের জুটি। ফেরার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ৬৯ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৬৭ রান।
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যর্থ হয়েছেন এদিনও। বিপদের সময় হাল না ধরে উল্টো দলকে আরও বিপদে ফেলে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১০ বলে মাত্র ৯ রান করেই ফিরে যান মিরাজ। আগের ম্যাচে তিনি আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। লিটন দাসের জায়গায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সুযোগ পান শামীম হোসেন পাটোয়ারি। ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটার। আসিথা ফার্নান্দোর শর্ট ডেলিভারিতে পুল করে ছক্কা মারার চেষ্টায় ফাইন লেগে জানিথ লিয়ানাগের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ২২ রান।
শামীম হোসেন পাটোয়ারি ফেরার পর বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন জাকের আলী অনিক ও তাওহীদ হৃদয়। দ্রুত রান তুলতে না পারলেও সফরকারীদের বিপাকে পড়তে দেননি তারা দুজন। ৬১ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। ৪০ বলে ২৪ রান করা জাকের ফেরেন আসিথা ফার্নন্দোর বলে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে পড়ে। জাকের ফিরলেও অন্য প্রান্তে থাকা হৃদয় দেখেশুনে ব্যাটিং করতে থাকেন। ৬৮ বলে তুলে নেন হাফ-সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডানহাতি ব্যাটারের এটি তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরি।
আসিথা ফার্নান্দোর অফ কাটারে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন তাওহীদ হৃদয়। ডানহাতি ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। তবে হৃদয় যখন উইকেটের মাঝে চলে গেছেন তখন না করেন তানজিম সাকিব। এমন অবস্থায় নন স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরতে পারেননি হৃদয়। ফলে নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। ৫১ রান করেই ফিরতে হয় হৃদয়কে।
এরপর হাসান মাহমুদ ও তানভীর ইসলাম আউট হন দ্রুতই। শেষ দিকে মোস্তাফিজকে সঙ্গে নিয়ে একাই লড়াই করেন তানজিম হাসান সাকিব। সমান দুটি করে ছক্কা ও চারে ২১ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন তানজিম। ৪.১ ওভার বাকি থাকতে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে পড়েন মোস্তাফিজ। আর তাতেই ২৪৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার হয়ে আসিথা ফার্নান্দো নেন ৪ উইকেট। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার ৩ উইকেট, চামিরা ও আসালাঙ্কা নেন একটি করে উইকেট।