১৮ জুন ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ১২:১৬ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সেদিন কেন ফিরোজা ধেকে ফিরে গেলেন বাবর?

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ১২:১৬ এএম

👁 23 views

কেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় ঢুকতে পারলেন না সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর? এই নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থক তো বটেই বাবরের অনুসারীদের মধ্যেও এক ধরনের কৌতূহল আছে। বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার দিন ফিরোজায় দলের মধ্যসারির অনেক নেতা ঢুকতে পারলেও বাবরকে গেটেই আটকে দেওয়া হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (৬ মে) লন্ডনে চিকিৎসা শেষে চার মাস পর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়া। এদিন বিমানবন্দর থেকে ফিরোজা পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী সড়কের দুইপাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। নেতাকর্মী ও অনুসারীদের ভিড় ঠেলে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ফিরোজায় পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়।

একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, ফিরোজার সামনে সকাল থেকেই অবস্থান নেন লুৎফুজ্জামান বাবর। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে কখনও ফিরোজার সামনের সড়কে পায়চারি করতে দেখা গেছে। আবার কখনও নিরাপত্তা চৌকির চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ফিরোজার কাছাকাছি এসে পৌঁছালে বাবরের তৎপরতা আরও বেড়ে যায়। গাড়িটি ফিরোজায় প্রবেশ করলে বাবরও পিছু পিছু প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের বাধার মুখে পড়েন একসময়ের দাপুটে এই প্রতিমন্ত্রী।

একাধিক ভিডিও এবং উপস্থিত নেতাকর্মীদের বরাতে জানা গেছে, লুৎফুজ্জামান বাবর একাধিকবার ফিরোজার প্রধান ফটক দিয়ে ভবনের ভেতর প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে তাকে ভিতরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। চেষ্টা করেও তিনি আর ভিতরে প্রবেশ করতে পারেননি। বাইরে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ির দিকে তাকিয়ে দলপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।

১৭ বছর কারাভোগের পর ১৬ জানুয়ারি মুক্ত হন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তার মুক্তিকে ঘিরে কারাফটকে জড়ো হয়েছিলেন লাখো মানুষ, তারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। বিপুল জনসমাগমই প্রমাণ করে, তিনি এখনো কতটা জনপ্রিয়।

তবে সবচেয়ে আলোচনার বিষয়— এত জনপ্রিয় হলেও বিএনপিতে তার কোনো পদ নেই। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, লুৎফুজ্জামান বাবরকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে বিএনপি? কারণ ১/১১ সরকারের আমলে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। যে ভিডিও এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে আছে।

লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে আরও দুইবার এমপি হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে বাবর পান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব, সে সময় তিনি বেশ প্রভাবশালী ছিলেন।

তবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় ধাক্কা আসে ওয়ান ইলেভেনের সময়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ২৮ মে গ্রেপ্তার হন তিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলায় দীর্ঘ কারাবাসে থাকতে হয় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে।

কারাবাসে থাকতেই এসে পড়ে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। লুৎফুজ্জামান বাবর তখন বন্দি থাকায় বিএনপি তার আসনে অন্য একজনকে মনোনয়ন দেয়। তবে তিনি কারাগার থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়।

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর—ভোটগ্রহণের মাত্র তিন দিন আগে—শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি বাবরকে বহিষ্কার করে। সে সময় তিনি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক। তবে এই বহিষ্কারাদেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভোটের কয়েকদিন পরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক চিঠির মাধ্যমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাবর ভবিষ্যতে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে অবদান রাখবেন বলে বিএনপি আশাবাদী। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলেও বাবরকে গত ১৭ বছর ধরে বিএনপির কোনো দলীয় পদ দেওয়া হয়নি। অথচ কারাগারে থাকা অবস্থায়ই দলের আরেক নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছিল।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x