খাগড়াছড়িতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’-এর ব্যানারে ডাকা সড়ক অবরোধ আজ মঙ্গলবারও অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারাও বহাল রয়েছে জেলার সদর ও গুইমারা উপজেলায়। জেলার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ শিথিল করা হলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়নি। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও অল্পসংখ্যক অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচল করছে।
অন্যদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে আন্দোলনকারী ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ছয় প্রতিনিধির বৈঠক হলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি মাঠে। উল্টো উপদেষ্টা রাঙামাটি গিয়ে গণমাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘ইউপিডিএফ’ ট্যাগ দেওয়ায় আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার অলিগলিতে কিছু দোকান খোলা থাকার পাশাপাশি মানুষের আনাগোনা দেখা গেলেও শহরের মূলকেন্দ্র শাপলা চত্বর এলাকা ছিল প্রায় জনশূন্য। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। দুই তিনজনের বেশি মানুষকে একসাথে চলতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার একা দেখলেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শহরে শুধু কয়েকটি টমটম চলাচল করতে দেখা গেছে।
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রোকন চৌধুরী জানান, রোববার দুপুর থেকে অবরোধ শিথিল থাকলেও স্বাভাবিকভাবে গণপরিবহন চলতে পারেনি। আজ সবগুলো কাউন্টারই বন্ধ। স্বাভাবিক অবস্থায় দৈনিক ১০০টি বিশেষায়িত গণপরিবহন খাগড়াছড়ি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় চলোচল করে। পর্যটন মৌসুমে সেটি কখনো দ্বিগুণ-তিনগুণও হয়ে যায়।
সোমবার বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারী ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ছয় প্রতিনিধি। বৈঠকেও তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। উল্টো উপদেষ্টা রাঙামাটি গিয়ে গণমাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘ইউপিডিএফ’ ট্যাগ দেওয়ায় আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
খাগড়াছড়ি জেলাসদর হাসপাতালের আরএমও বলেন, গুইমারাতে আহত ১৪ জনকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৩ জন হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ও ১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে। গতকাল সোমবার থেকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত শনিবার খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর সদর উপজেলা, পৌরসভা এলাকা এবং গুইমারা উপজেলায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরের এক স্কুল ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। অবরোধ চলাকালে রোববার খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে তিনজন মারা যান। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ১৩ সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয়দের অনেকে আহত হন।