ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর দুপুর পৌনে ১টায় পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। প্রেস সচিব বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল থেকেই শুনছিলাম যে লোকজন জড়ো হয়ে ঢাকামুখী হচ্ছে। ওই দিন পুলিশের উপস্থিতিও কম দেখেছি। বেলা ১২টার টার দিকে দেখলাম, বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ লোক জড়ো হয়েছে।
আমার জানার ইচ্ছা হলো, গণভবনের ভেতরে কী হচ্ছে? ওই পরিপ্রেক্ষিতে ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে একজনকে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, উনি (শেখ হাসিনা) তো গণভবন ছেড়ে চলে গেছেন। দেখেন ভারতেও চলে যেতে পারেন! সঙ্গে সঙ্গে আমার বসদের জানিয়েছি। আমার এএফপির ওখানে আরও কয়েকজন সাংবাদিক ছিলেন। কিন্তু বসরা বলেছেন, সিঙ্গেল সোর্স, তাছাড়া আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তাই ওইটা দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।
কারণ শেখ হাসিনা চলে গিয়ে আগরতলায় নামতে না পেরে আবার ফিরে এলে তখন তো আমার সংবাদটাকে ভুয়া বলা হবে। বা সে যদি টিকে যেত, তাহলে তো বলত যে আমি রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছি। এতে আমার ফাঁসি বা গুমও হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল! সব মিলিয়ে এএফপি থেকে জানানো হয়, আরেকজন সোর্স নিশ্চিত করলে তাহলে দেয়া যাবে। পরে আরেকজনকে ফোন দিয়ে নিশ্চয়তা পেলাম। দ্বিতীয় সোর্সের কাছ থেকে আরও বিস্তারিত নিলাম। তাদের কাছে তথ্য ছিল যে উত্তরা থেকে ৫ লাখ লোক আসছে। আর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী ওই দিক থেকে আরও সাড়ে ৩ লাখ লোক আসছে।
এসএসএফের কথায় সব লোক ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে আসলে জনস্রোত তারা ঠেকাতে পারবে না। আর এত লোককে হত্যা করে টিকে থাকাও তো অসম্ভব। সেই জায়গা থেকে শেখ হাসিনাকে জোর করা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা বিটিভিকে ডেকে জাতির উদ্দেশে একটা ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। ওই রেকর্ডটা আর এসএসএফ করতে দেয়নি। কারণ ওই সময়টুকুও ছিল না, যোগ করেন শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, ওরা প্রথমে রওয়ানা দেয় বাংলাদেশ-চায়না সেন্টারের দিকে। তাদের প্রথম পরিকল্পনা ছিল, ওইটা দিয়ে জাহাঙ্গীরগেইট হয়ে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে কুর্মিটোলা এয়ারবেস হয়ে এয়ারপোর্টে ঢুকবে। কিন্তু বাংলাদেশ-চায়না সেন্টারের কাছে আসতে আসতে তারা খবর পেল, উত্তরার জনস্রোত এরইমধ্যে বিমানবন্দরের কাছাকাছি চলে এসেছে। তখন তারা বললো এটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তেজগাঁওয়ে পুরানো বিমানবন্দরে গিয়ে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে চলে গেল।
শফিকুল আলম বলেন, এটার পুরো বর্ণনা লিখে দিয়ে দিলাম। তখন আমাদের রিপোর্ট ব্রেকিং হলো। বাংলাদেশের সব পত্রিকা এএফপির ক্লায়েন্ট। অনেকগুলো টিভিও এএফপির ক্লায়েন্ট। ব্রেকিং হওয়ার পর তারা এএফপি সূত্র দিয়ে শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার কথা জানায়। এটা হওয়ার পর আমি অসংখ্য ফোন পাচ্ছিলাম। তাদের ফোন পেয়ে আমি আরও টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমার রিপোর্ট তো আন্তর্জাতিকভাবে চলে গেছে।
তখন আমি টেনশনে সুরা-কেরাত পড়া শুরু করি। কারণ যদি এমন হতো যে তিনি আবার ফিরে এসেছেন, তখন তো আমার লাইফ শেষ! এভাবে সময় কেটেছে। আমরা আরও প্রতিবেদন করলাম। তখন ২টার দিকে বিটিভিতে স্ক্রল দেখলাম যে, সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তখন আমি বুঝলাম, সে চলে গেছে। আর আমরা ভয় পুরোপুরি কেটে যায়।