২৪ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ২:০৫ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

এবার কাফনের কাপড় পরে এনবিআরে কলমবিরতি

প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ২:০৫ পিএম
এবার কাফনের কাপড় পরে এনবিআরে কলমবিরতি। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান (এনবিআর) মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ, কর্মকর্তাদের হয়রানি ও অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আবারো কলম বিরতি শুরু হয়েছে।

আজ সোমবার (২৩ জুন) আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কলম বিরতি পালনের সময় কাফনের কাপড় পরে হাজির হন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সকাল থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাজির হতে থাকেন। এসময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্লাকার্ড দেখা গেছে। যেখানে দেখা গেছে ‘গোলামী আইন বাতিল কর, করতে হবে’ ‘বদলির নামে প্রহসন মানি না, মানবো না’ কিংবা বদলির নামে জুলুমবাজি বন্ধ করতে হবে ইত্যাদি লেখা ছিল।

এদিকে গতকাল রবিবার এনবিআরের আয়কর বিভাগে উপকর কমিশনার পর্যায়ে পাঁচ কর্মকর্তার রদবদল নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে আন্দোলন দমাতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলছেন, সরকারি কর্মচারীদের ঢাকার বাইরে বা ভিন্ন জেলায় বদলি করলে যোগদানের জন্য ন্যূনতম ৫ কর্মদিবস সময় থাকলেও এনবিআরের সর্বশেষ আদেশে তা মানা হয়নি।

শনিবার (২১ জুন) সংবাদ সম্মেলনে সোমবার ঢাকা সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি, অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্ব-স্ব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।

সরকার গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে। এর বিরোধিতা করে গত ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতির আন্দোলন করে এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।

গত ২৫ মে রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। এর ফলে ২৬ মে কলমবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এনবিআর। তবে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও তাকে অসহযোগিতা করার ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

গত ২০ জুন এনবিআর কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের জন্য ছয় সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার। এনবিআর সদস্য (কর, লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্ট) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীকে এই কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ করে শনিবার (২১ জুন) বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদ। এসময় সংগঠনের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকা এতে উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, ইতিমধ্যে সংস্কার কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়নের খড়্গ নেমে এসেছে। আবার, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উসকানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তার মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রম সময়ক্ষেপণ বৈ কিছু নয় বলে ঐক্য পরিষদ মনে করে।

উল্লেখ্য, আগে থেকেই ঐক্য পরিষদ রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। এনবিআর কর্তৃক গঠিত কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

এনবিআর সংস্কারে গঠিত নতুন কমিটি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনাও করা হয়নি।

এনবিআর উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন জানিয়ে বলা হয়, এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। যে রাজস্ব অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে এতদিন কর্মসূচি চলেছে, তা জারি হওয়ার পর যারা একে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকায় ও ফেসবুকে বক্তব্য দিয়েছিলেন, এনবিআরের তেমন সদস্যদের গঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ থেকে এটি স্পষ্ট যে, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারে সরকারের সদিচ্ছাকে এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হচ্ছে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়, কারণ তিনি এটি বাস্তবায়ন হতে দেবেন না। আপনারা সবাই জানেন, পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী যে ৪৪ জন (এর মধ্যে ছয়জনকে ইতিমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে) আমলার তালিকা করা হয়েছে, তার মধ্যে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান তিন নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন। সুতরাং, সংস্কারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করবেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x