২৭ জুন ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১১:৫৮ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

গাজায় এক মাসে ‘ত্রাণের ফাঁদে’ গেল ৫৪৯ ফিলিস্তিনির ত্রাণ

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
গত চার সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৫৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরো ৪০৬৬ জন আহত হয়েছেন

ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় এখনো ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে পুরোদমে। থেমে নেই হত্যাকাণ্ডও। সর্বশেষ গত এক মাসে গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া অন্তত ৫৪৯ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গাজার সরকারি জনসংযোগ বিভাগ এতথ্য জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত চার সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৫৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরও ৪ হাজার ৬৬ জন আহত হয়েছেন।

এক বিবৃতিতে গাজা কর্তৃপক্ষ এসব ত্রাণকেন্দ্রকে ‘মৃত্যুকূপ’ আখ্যা দিয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, এসব কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে আরো ৩৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কথিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে যা ঘটছে, তা যুদ্ধাপরাধ। এর জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী সরাসরি ও সম্পূর্ণভাবে দায়ী। আমরা এই চলমান অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, যেখানে প্রতিদিন পরিকল্পিতভাবে ও নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষকে ডেকে এনে হত্যা করা হচ্ছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘দখলদার (ইসরায়েলি) বাহিনী খাবারকে গণহত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা যে ত্রাণের কথা বলছে, সেটিকে আসলে নিধনযন্ত্র ও দমনপীড়নের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছে।’

ইসরায়েলি গুলি আর বোমার আঘাতে তো প্রাণ হারাচ্ছেই ফিলিস্তিনিরা, সেই সঙ্গে গত কয়েক মাসে যুক্ত হয়েছে অপুষ্টি। ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে অপুষ্টিতে ভুগে মৃত্যু হয়েছে দুই নবজাতকের।

এদিকে, ত্রাণ সহায়তার নামে প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি প্রশাসন, যাতে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় ফিলিস্তিনিদের ‘ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে’ জড়ো করে নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত ওই মানুষদের ওপর নির্বিচারে গুলি ও বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলিরা।

গত মাসের শেষে জিএইচএফ গাজায় প্রবেশ করে। এরপর থেকে সংগঠনটির ওপর হামলার ঘটনাগুলো নিয়ে চাপ বাড়ছে। তবে তারা এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি। ইসরায়েল বলেছে, জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশে যারা গুলি বা হামলার শিকার হচ্ছেন, তারা নাকি ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’, যারা ইসরায়েলি সেনাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

সমালোচকেরা এসব কেন্দ্রকে ‘মৃত্যুকূপ’ বা ‘মানব হত্যা কেন্দ্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জিএইচএফের তীব্র সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা। তাদের অভিযোগ, এই সংগঠন গাজার জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বরং, সামরিক অভিযান চালানোর জন্য এই ত্রাণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল।

এদিকে গাজার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশ করতে না পারায় উপত্যকার স্বাস্থ্য ও মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যেসব হাসপাতাল এখনো কোনোভাবে চালু আছে, সেগুলোও কার্যত ধসে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। কারণ আহতদের সংখ্যা এত বেশি যে, হাসপাতালে আর জায়গা নেই। বিশেষ করে ওয়ার্ড ও আইসিইউগুলো সম্পূর্ণ ভরে গেছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x