কথায় আছে Every action has it’s same and opposite reaction—এটাই কি তবে ঘটেছে শেফালি জরিওয়ালার ক্ষেত্রে?
প্রায় ৭ দিন হতে চলল ৪২ বছরের শেফালি জরিওয়ালার আকস্মিক মৃত্যুতে ‘শকড’ সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ। এখনো শেফালির অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট আর হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজছে নেটিজেনদের একাংশ। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো আসেনি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শেফালির দেহে গ্লুটাথিয়ন, ভিটামিন সি-এর ইনজেকশন, গ্যাসের ওষুধের মতো প্রচুর ড্রাগের উপস্থিতি ছিল। বয়স ধরে রাখতে গিয়েই কি প্রাণ হারালেন ‘কাঁটা লাগা’ গার্ল?
শেফালি যে অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট করাচ্ছিলেন, তাতে ভিটামিন সি ও গ্লুটাথিয়ন ছিল। এগুলো আদতে এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। নানা কারণে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয় এবং কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বয়সের আগেই বার্ধক্য ডেকে আনে। অক্সিডেটিভ ড্যামেজকে আটকানোর একমাত্র উপায় হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। গ্লুটাথিয়ন প্রান্তশ্বসনের (Peripheral Respiration) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিডেটিভ ড্যামেজকে আটকে দেয়। সেই কারণেই অ্যান্টি-এজিং বা বার্ধক্যরোধী ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে এত কদর গ্লুটাথিয়নের। কিন্তু এই উপাদান কতটা নিরাপদ?
কসমেটিক সার্জনরা বলেন, ‘সাধারণত লেবুজাতীয় ফল খেলেই শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। তবে গ্লুটাথিয়ন চটজলদি খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় না। কিন্তু কোনো রোগীকে গ্লুটাথিয়ন ইনজেকশন দেওয়া হয় না।’ সাধারণত পেটের বড় কোনো সার্জারি হলে, যেমন খাদ্যনালীর অপারেশন বা কোনো ক্যানসারের অস্ত্রোপচার হলে, দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য গ্লুটাথিয়ন ট্যাবলেট দেওয়া হয়। তবে তাতে জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামের মতো আরো ‘ড্রাগ’ থাকে।
ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় আগে গ্লুটাথিয়ন ইনজেকশন দেওয়া হতো, সেখানে মৃত্যুর ঘটনাও দেখা গিয়েছে। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ‘ব্যান’ করেছে গ্লুটাথিয়ন ইনজেকশন। অথচ ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, গোয়ায় হরদম চলছে এই অ্যান্টি-এজিংয়ের ব্যবসা।’ মূলত বিউটি পার্লারগুলো এই অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টের ‘ডেরা’। স্বাভাবিক ভাবেই পার্লারে কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এই গ্লুটাথিয়ন ইনজেকশন দেওয়া হয় না। ফলে এধরনের অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট যেকোন ক্ষতি করবে না, জোর দিয়ে বলা যায় না মোটেই।
তারা বলছেন, গ্লুটাথিয়ন ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে বাধ্য। তারা আরো বলেন, ‘খুব কম গবেষণা রয়েছে, যেখানে জানা গিয়েছে গ্লুটাথিয়ন অ্যান্টি-এজিং, হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে দারুণ কাজ দিয়েছে। তা ছাড়া এমন কোনো তথ্য নেই, যেখানে উল্লেখ রয়েছে কত দিন ধরে এবং কত ডোজে গ্লুটাথিয়ন ব্যবহার করলে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়।’
অন্যদিকে, গ্লুটাথিয়ন বা ভিটামিন সি অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট বেশ খরচসাপেক্ষ। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ধরনের ট্রিটমেন্ট করানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আজকাল বাজারে আরো অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট রয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়, কম খরচে চামড়া টানটান রাখবে। সেগুলোই বা কতটা কার্যকর?
বাজারে রমরমিয়া বিক্রি হচ্ছে এলএইডি মাস্ক। বিউটি ব্লগারদের দাবি, এই মাস্ক অ্যান্টি-এজিংয়ের কাজ করে। ত্বকে কোলাজেন গঠন থেকে শুরু করে ত্বকের প্রদাহ কমাতে এই এলএইডি মাস্ক নাকি দারুণ কার্যকর। যারা এই মাস্ক কিনতে পারছেন না, তারা ‘অলটারনেটিভ’ সার্ভিস কেনার জন্য পার্লারে গিয়ে এই এলইডি মাস্ক ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই: বয়সের ছাপ যেন মুখে না পড়ে। আদতে কি কাজ হচ্ছে? ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এধরনের কোনো ট্রিটমেন্টই কার্যকর নয়। কোনো মেডিক্যাল বইয়ে এধরনের ট্রিটমেন্টের উল্লেখই নেই। একমাত্র কসমেটিক সার্জনরা যে ট্রিটমেন্ট করেন, সেগুলোই নিরাপদ।’
কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো: অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টের দ্বারা বার্ধক্যকে কি ঠেকিয়ে রাখা যায়?
কালের নিয়মে বার্ধক্য আসে। তবে শুধু বয়স বাড়লেই যে বার্ধক্য হানা দেবে, এমনটাও নয়। অনেক সময় বয়সের আগেও চামড়া কুঁচকে যেতে পারে। পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল, বদভ্যাস, স্ট্রেস—সবই একটু একটু করে বাড়িয়ে তোলে ত্বকের বয়স। ত্বকের যৌবন ধরে রাখতেই পার্লারগুলোয় বেড়েছে অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টের সার্ভিস।
চিকিৎসকরা বলেন, ‘হাজার ট্রিটমেন্ট করিয়ে, ওষুধ খেয়েও বার্ধক্যকে আটকানো যায় না। যে সব অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট বাজারে পাওয়া যায়, তার একটাও দীর্ঘমেয়াদি ফল দেয় না।’ বোটক্স হোক বা অন্য কোনো ট্রিটমেন্ট, সেগুলোর প্রভাবও নির্দিষ্ট সময়ের পর কমজোর হতে শুরু করে। তখন আবার মুখে-চোখে উঁকি দেয় বার্ধক্য। সুতরাং, বয়সকে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু ত্বক সুস্থ রাখা যায়। স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, শরীরচর্চা, সঠিক স্কিন কেয়ার—এমন ছোট ছোট বিষয়ই ত্বক সুন্দর রাখে।