লটকনের গ্রাম পিরুজালী। কাঁঠালের জনপদ পিরুজালী। এ গ্রামে লিচুগাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে লিচু। আনাচেকানাচে গোলাপ-জবা-হাসনাহেনার বাগান। অপার সৌন্দর্যে ভরপুর পিরুজালী গাজীপুর সদর উপজেলার সর্ব উত্তরের একটি সুন্দর মনোরম গ্রাম।
নানা ফুল ও ফলের গাছে ভরপুর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এ গ্রামে ছুটে আসে হাজারো মানুষ। সারাদিনের কোলাহলমুখর সময় শেষে এ গ্রামে একসময় নেমে আসত নিগুঢ় অন্ধকার। রাতের জোনাকির ঝিলমিল আলোয় এই জনপদের মানুষ দেখত বিদ্যুতের স্বপ্ন। বিদ্যুতের আলোর ঝলকানিতে আজকের পিরুজালী রাতের আঁধারেও চমকিত। চাঁদের উথলে পড়া আলোয় এই গ্রামের সারি সারি গাছের পাতারাও যেন জেগে ওঠে। সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ।
গাজীপুর জেলা তথা ঢাকা বিভাগের মধ্যে বৃহত্তম এই গ্রামটির পশ্চিমাংশে বয়ে চলেছে শালদো নদী। এর পশ্চিম দিকে তাকালেই দেখা যায় কালিয়াকৈর উপজেলার ছোট ছোট গ্রাম। দক্ষিণ পাশ দিয়ে বহমান লবনদহ নদীটি এই পিরুজালী গ্রাম থেকে পূর্ব ডগরী এলাকাকে বিভক্ত করেছে। বৈচিত্র্যে ভরপুর এই গ্রামটি সময়ের পরিক্রমায় একটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে পাকা ও সেমি পাকা রাস্তা যোগাযোগের সুবিধা করে দিয়েছে।
প্রায় ৬০ হাজার লোকের বসবাস পিরুজালীতে। বর্তমানে পিরুজালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন। পিরুজালী গ্রামে আছে ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭টি কিন্ডারগার্টেন, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা।
পাতিল বান্ধা, মাস্টার পাড়া, হাটখোলা, হাজীপাড়া, বর্তাপাড়া, ময়তাপাড়া, সরকার পাড়া, কাচারিপাড়া, আকন পাড়া, বকচরপাড়া, মন্ডলপাড়া এসব টুকরো টুকরো এলাকা নিয়ে পুরো পিরুজালী। প্রবেশমুখে হাটখোলা ব্রিজ কিংবা সড়ক ঘাটা ব্রিজ দিয়ে গ্রামে প্রবেশ করলে দেখা যাবে খোলা আকাশের নিচে বিরাট এলাকাজুড়ে জলরাশি, তারপর পিরুজালী গ্রাম।
গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে রয়েছে ফলের গাছ। রয়েছে বাহারি প্রজাতির কাঁঠাল, আম বাগান। ফল মৌসুমে লিচু গাছে থাকে থোকা থোকা লিচু। মৌসুমি ফল বিক্রি করে গ্রামের মানুষ উপার্জন করে অর্থ। লটকন, আনারস, কাঁঠাল, আম এই এলাকার চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় রাজধানীতে। এই গ্রামের আকর্ষণে এসে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ উত্তরাংশে নীরব-নিস্তব্ধ জায়গাজুড়ে গড়ে তুলেছেন নুহাশ পল্লী।
স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ সরকার মঞ্জু জানালেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাম পিরুজালী যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। শিক্ষিত জনের অভাব নেই। চাকরিজীবীর সংখ্যাও বেশ। আয়তনের দিক দিয়ে দেশের বৃহত্তম গ্রাম হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামের পরেই আমাদের এই গ্রাম। হাডুডু খেলায় অংশ নিতে এই গ্রামের মানুষ চলে যায় অন্যত্র। কথিত আছে শত বছর পূর্বে থেকেই এই গ্রামের ক্রীড়ামোদী মানুষ হাডুডু খেলায় খুবই পারদর্শী।