দীর্ঘ দেড় যুগ বা ১৮ বছর ধরে সন্তানধারণের চেষ্টা করছিলেন এক নারী। অবশেষে গর্ভধারণের মাধ্যমে সন্তানসম্ভবা হলেন তিনি আর আশ্চর্যের বিষয় হলো—এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করল কৃত্রিম বুদ্ধিমতা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দম্পতি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্যে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অ্যাজুস্পার্মিয়া নামে একটি বিরল সমস্যার কারণে আইভিএফ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। জেনে রাখা ভালো, এধরনের সমস্যা হলে পুরুষ সঙ্গীর বীর্যে কোনো পরিমাপযোগ্য শুক্রাণু থাকে না। একটি সাধারণ সুস্থ বীর্যের প্রতি মিলিলিটারে লাখো শুক্রাণু থাকে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সব দরজায় কড়া নাড়া শেষে ওই দম্পতি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ফার্টিলিটি সেন্টার (সিইউএফসি)-এর দ্বারস্থ হন একটি অভিনব পদ্ধতির চেষ্টা করার জন্য। তারা স্টার (স্পার্ম ট্র্যাকিং অ্যান্ড রিকভারি) পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতি পুরুষের মধ্যে লুকানো শুক্রাণু শনাক্ত করতে এআই ব্যবহার করে। আর অবশেষে ওই দম্পতি সাফল্যের মুখ দেখেন।
ফার্টিলিটি সেন্টারের গবেষকরা এআই-চালিত পদ্ধতির সাহায্যে বীর্যের নমুনা পরীক্ষা করে লুকানো শুক্রাণু খুঁজে পেতে সক্ষম হন। শুক্রাণু পাওয়ার পর এটি আইভিএফের মাধ্যমে স্ত্রীর ডিম্বাণু নিষিক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয় এবং তিনি স্টার পদ্ধতি ব্যবহার করে গর্ভধারণকারী প্রথম মহিলা হন।
ওই নারী বলেন, আমি আসলে গর্ভবতী কিনা তা বিশ্বাস করতে আমার দুই দিন সময় লেগেছিল। আমি এখনও সকালে ঘুম থেকে উঠে বিশ্বাস করতে পারি না যে এটি সত্য। স্ক্যান না দেখা পর্যন্ত আমি এখনো বিশ্বাস করি না যে আমি গর্ভবতী। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে আমার সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখবে।
স্টার বা এসটিএআর পদ্ধতি
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ফার্টিলিটি সেন্টার (সিইউএফসি)-এর পরিচালক ড. জেভ উইলিয়ামস এবং তার সহকর্মীদের পাঁচ বছরের গবেষণার পর এসটিএআর পদ্ধতিটি তৈরি করা হয়। বাস্তব জীবনে এই পদ্ধতির ফলাফল দেখে দলটিও অবাক হয়েছিল।
ড. জেভ উইলিয়ামস বলেন, একজন রোগী একটি নমুনা প্রদান করেছিলেন এবং অত্যন্ত দক্ষ প্রযুক্তিবিদরা শুক্রাণু খুঁজে বের করার জন্য সেই নমুনাটি দুই দিন ধরে অনুসন্ধান করেন। তারা কোনো শুক্রাণু খুঁজে পাননি। আমরা এটি এআই-ভিত্তিক স্টার সিস্টেমে নিয়ে এসেছিলাম। এক ঘণ্টার মধ্যে এটি ৪৪টি শুক্রাণু খুঁজে পেয়েছিল। ঠিক তখনই, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, ‘বাহ, এটি সত্যিই একটি গেমচেঞ্জার। এটি রোগীদের জন্য এত বড় পার্থক্য আনতে চলেছে’।
একটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা চিপে একটি অণুবীক্ষণের নিচে বীর্য নমুনা স্থাপন করার পরে স্টার সিস্টেম উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইমেজিং ব্যবহার করে পুরো বীর্য নমুনা স্ক্যান করে এবং এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আট মিলিয়নেরও বেশি ছবি ধারণ করে। এআই, যা শুক্রাণু কোষ শনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষিত, তারপর কাজ শুরু করে এবং প্রজনন কোষটি শনাক্ত করে।
সূত্র: সিএনএন