গত শুক্রবার (০৪ জুলাই) দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা সদরে এনসিপির উপজেলা কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘আমাদের দেশের ভোটাররা ২০০ টাকায় ভোট বিক্রি করেন। আপনারা যদি টাকা দিয়ে ভোট বিক্রি করেন, তাহলে যোগ্য নেতা কোনোদিনও ক্ষমতায় আসবে না। আপনি একদিন আপনার ভোটটা যদি বিক্রি করে দেন, তারা পাঁচ বছর ধরে নির্যাতন করবে। সেজন্য নেতা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে প্রাধান্য দেবেন।’
হাসনাতের ‘২০০ টাকায় ভোট বিক্রি’র বিষয়টি সোশালে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয় এবং গতকাল সেটি ছিল আলোচনার অন্যতম ট্রেন্ডিং। সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকেই বিষযটি নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদেরই একজন আরিফ জেবতিক।
জনপ্রিয় এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তার সাম্প্রতিকতম পোস্টে এই প্রসঙ্গটি টেনে লেখেন, দেশের সাধারণ জনগণ দুইশ টাকায়, পাঁচশ টাকায় ভোট বেচে দেয়; এইটা বলা হচ্ছে হালের ট্রেন্ড। ম্যাডলিন আলব্রাইট (Madeleine Albright) এর ফ্যাসিজম : আ ওয়ার্নিং (Fascism : a warning) এ পড়েছিলাম, ফ্যাসিজমের প্রথম দিককার ওয়ার্নিং হচ্ছে যখন নেতারা মনে করতে থাকে যে তারাই সব বুঝে, আর পাবলিক হইল ধইন্যাপাতা।

তিনি বক্তব্যদাতাকে উদ্দেশ করে বলেন, তো যারা এখন পাবলিককে দুইশ টাকার কি পাঁচশ টাকার লোভী ভোট বিক্রেতা ভাবছেন, তারা একটু মেমোরি লেইনে ঘুরে আসেন। মাত্র গত বছর জুলাই-আগস্টে যারা মারা গেছেন, তাদের তালিকাটা দেখেন। সেখানে দুই লাখ টাকায়ও ভোট না বিক্রি করা আমার মতো হোয়াইট কলার এলিট শ্রেণীর কয়জন মারা গেছেন আর সাধারণ মানুষ, রিকশাওয়ালা-শ্রমিক-দোকানদার-সবজিবিক্রেতা-বস্তির মানুষ কতজন মারা গেছেন তার একটা তালিকা কইরেন। জুলাই-আগস্টে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মরেছে যে স্পটে সেই যাত্রাবাড়ীতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এটা প্রধানত শ্রমজীবী মানুষের এলাকা। বিসিএসের চাকরিতে কোটা থাকা না থাকার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
আরিফ জেবতিক ইতিহাসে আলো ফেলে লেখেন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধের একাত্তর থেকে হালের নব্বইয়ের এরশাদ পতনের আন্দোলন—সবগুলো ইতিহাস ঘেটে দেখেন। নারায়ণগঞ্জ আর গাজীপুর থেকে পিলপিল করে শ্রমিকরা এসে ঢাকা শহর স্তব্ধ করে দিয়েছিল বারবার। সাধারণ মানুষ। একজন দরিদ্র রিকশাওয়ালা নূর হোসেন বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নীপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল আমাদের চোখের সামনেই।
পোস্টের শেষে এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখেন, কোনো আন্দোলন থেকেই এই দরিদ্র সাধারণ মানুষ কখনোই কিছু পায়নি। প্রতিটি আন্দোলনের পর একদল নতুন খাদকের খপ্পরে পড়েছে দেশ। অথচ সেই দরিদ্র মানুষদেরকে ‘পাঁচশ টেকার ভোট বিক্রেতা’ বলার ফ্যাশন থেকে এই দেশ কখনোই মুক্তি পেল না…