ধনীর চিড়া। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এক চিড়ার নাম। সুস্বাদু ও ঘ্রাণে ভরা এই চিড়া নাকি বাতাসেও ওড়ে। ঐতিহ্যবাহী এই খাবার শুধু এই জেলার নয়, দেশসেরা হিসেবে রয়েছে পরিচিতি।
কালিয়াকৈর শহরের পার্শ্ববর্তী বারবাড়িয়া গ্রামের ধনী রানী সরকারের নামে এই চিড়ার নামকরণ হয়েছে। ধনী রানী সরকার ও তার সন্তানেরা সংসারের অভাব মেটাতে নাইয়াশাইল ধান থেকে চিড়া উৎপাদন করত। ঢেঁকি ছাটা এই চিড়া বিক্রি করত এলাকায় এলাকায়।
দরিদ্র পরিবারের ওই ধনী সরকার এর ধনীর চিড়া অল্পদিনের মধ্যে সমাদৃত হয় এলাকায় ও এলাকার বাইরে। এমনকি ওই সময়ে বিদেশেও এই চিড়া নিয়ে যেত অনেকেই।
ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া পরিবারেও যেকোনো উপায়ে এই চিড়া পৌঁছেছে বলে কথিত আছে।
কালিয়াকৈর শহরের পার্শ্ববর্তী নামাশুলা, মেদি এলাকার লোকজন জানালেন, স্থানীয় মকশ বিলে নাইয়াশাইল ধানের চাষ হতো, ওই ধান থেকেই উৎপাদিত হতো ধনীর চিড়া। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ধামরাই উপজেলার চাঁনপুর বিলে ধানের চাষ হতো। ওই ধান সংগ্রহ করে ধনী সরকার ও তার পরিবারের লোকজন তা থেকে চিড়া উৎপাদন করতেন।
কালের পরিক্রমায় ধনী সরকারের পরিবারের লোকজন অতিদামি ওই ধান সংগ্রহ করতে হিমশিম খান। এমতাবস্থায় অল্পপরিসরে চিড়া উৎপাদন করেন ও তা স্থানীয় কালিয়াকৈর, ভাওয়াল মির্জাপুর, ধানতারা বাজারে বিক্রি করতেন।
কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের চাবাগান গ্রামের হাবিল উদ্দিন মাস্টার জানান, ধনীর চিড়া সুস্বাদু এবং এর রয়েছে ঘ্রাণ। মকশ বিলসহ নানা বিলে এখন ওই চিড়ার উপযোগী নাইয়াশাইল ধান উৎপাদন হয় না। হালে ধনীর চিড়ার কারিগররা অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েছে। চাহিদামোতাবেক এই চিড়ার উৎপাদন এখন আর হয় না।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আইয়ুব রানা জানালেন, কালিয়াকৈর শহরের মিষ্টির দোকানগুলোতে অল্পপরিসরে ধনীর চিড়া বিক্রি হয়। ১৮৮৬ সালের দিকে স্থানীয় জমিদার পরিবারসহ ভারতবর্ষে ওই চিড়া আমদানি করা হতো।
স্থানীয় ভাওয়াল মির্জাপুর বাজারে স্বপন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক স্বপন ঘোষ জানান, ধনীর চিড়া প্রতি কেজি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এই চিড়ার অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।