অবিরাম বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসছে ঢলের পানি। সেই সঙ্গে পানি বাড়ছে পাবনার পদ্মা নদীতে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে। ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে পাবনার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাট। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বেশকিছু এলাকা। তীব্র ভাঙনের ফলে বসতবাড়ি হারানোর আতঙ্ক নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে।
মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটের পূর্ব পাশের ফেরি পন্টুনের নিচ থেকেই বড় বড় মাটির চাঁই ভেঙে নদীতে পড়ছে। ফেরিঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত এই ভাঙন চলছে। ফেরির প্রধান পন্টুনের মাত্র কয়েক হাত দূর থেকে এই ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর তীর ঘেঁষে কয়েক গজ দূরেই বসতি নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের। অব্যাহত ভাঙন দেখে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারানোর আতঙ্ক ভর করেছে তাদের মাঝে।

নদীপারের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ও আবুল কাশেম শেখ বলেন, ‘নদীর পশ্চিম পাশে বড় বড় ব্লক দিয়ে নদীর তীর রক্ষা করা হয়েছে। অথচ পূর্বপাশে কোনো ব্লক নেই। কয়েক বছর ধরেই ভাঙছে, কিন্তু এবারের ভাঙনটা তীব্র মনে হচ্ছে। আর কয়েকদিন গেলে হয়তো আমাদের ঘর-বাড়ি নদীতে চলে যাবে। তারপরও কেউ দেখার নেই। আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারাতে যাচ্ছি। আমরা কিছুই চাই না, শুধু নদীর তীর রক্ষা চাই।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে নদী শাসন না করা এবং নদী রক্ষায় অন্যান্য ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলেই এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ঘাটের দুই পাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করা হয়। অপরিকল্পিতভাবে এই বালু উত্তোলনের কারণেও এই ভাঙন হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটের এই অবস্থার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নাজিরগঞ্জ ঘাটের পোর্ট অফিসার তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ’চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালে আমাদের ঘাটের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো ইউএনও বা ডিসি সাহেব আমাদের সেটা দেননি। এজন্য আমরা ঘাটের কোনো উন্নয়ন করতে পারছি না। এভাবে আর কিছুদিন গেলে তো আমার ঘাটই নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। বাধ্য হয়ে আমি আমাদের কোটি টাকার পন্টুন সরিয়ে নিতে বাধ্য হব।’
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ‘স্থানীয়দের কিছু আপত্তির কারণে তাদের (বিআইডব্লিউটিএ) জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আর নদী ভাঙনের বিষয়ে আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এটা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা করছে। আমরা ইতিমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে উদ্যোগ নিয়েছি।’