৩ আগস্ট ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৬ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

প্রবাসীর পাঠানো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ স্ত্রী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে; পাল্টাপাল্টি মামলা

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
প্রবাসীর পাঠানো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ স্ত্রী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে; পাল্টাপাল্টি মামলা

পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় এবং বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাওয়ায় প্রবাসী স্বামী আব্দুল জব্বারের নামে যৌতুক মামলার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী হিমায়ারা খাতুন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী জব্বার সৌদি আরবে কর্মরত। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাঁচদিঘল গ্রামে। তার স্ত্রী হিমায়ারা খাতুন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মল্লিকপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের হেলালুর রহমানের মেয়ে।

ভুক্তভোগী আব্দুল জব্বার ও তার পরিবারের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, তিন বছর সৌদি আরব থাকার পর দেশে ফিরে ২০২২ সালের ১ মে হিমায়ারা খাতুনকে বিয়ে করেন জব্বার। বিয়ের দেড় মাস পরই পুনরায় সৌদি আরব ফিরে যান তিনি। প্রবাসে থেকে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে হিমায়ারার নামে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠান জব্বার। যার প্রমাণপত্র তার কাছে রয়েছে।

প্রবাসী আব্দুল জব্বারের দাবি, ২০২৪ সালে দেশে ফেরার পর শ্যালকের সুন্নতের অনুষ্ঠানের জন্য স্ত্রী হিমায়ারাকে এবং জমি লিজ নেওয়ার জন্য শ্বশুর হেলাল ও বড় চাচা শ্বশুর বেলালকে আরো ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে হিমায়ারা, তার বাবা ও বড় চাচাকে জমি লিজ নেওয়ার জন্য মোট ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেন জব্বার। পরে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থানকালে স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিক পরকীয়া প্রেমঘটিত বার্তা দেখে বিষয়টি শাশুড়িকে জানান তিনি। কিন্তু শাশুড়ি বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যান।

পরিবারের শান্তি রক্ষায় আবারো সৌদি আরবে ফিরে যান আব্দুল জব্বার। তবে কিছুদিন পর এক ব্যক্তি ফোন করে জব্বারকে হুমকি দেন। যিনি নিজেকে হিমায়ারার প্রেমিক বলে দাবি করেন। ওই ব্যক্তি জব্বারকে জানিয়ে দেন, ‘তোমার হিমায়ারার ওপর কোনো অধিকার নেই। ফোনে কথা বলবে না, ফেসবুক থেকে ছবিও ছাড়বে না, সেই অধিকার হারিয়ে ফেলেছ।’

পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটলে জব্বার ও তার পরিবার হিমায়ারার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে এবং প্রবাস থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে উল্টো হুমকি দেয় হিমায়ারা, তার বাবা, মা ও বড় চাচা। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজেদের বাঁচাতে হিমায়ারা খাতুন বাদী হয়ে জব্বার ও তার পরিবারের চারজনকে আসামি করে পাবনার আদালতে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে জব্বারের মোবাইল নম্বর ব্লক করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় হিমায়ারা ও তার পরিবার।

আর টাকার হিসাব না পেয়ে জব্বারের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মা বাদী হয়ে হিমায়ারার বাবা, মা, বড় চাচাকে আসামি করে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের একটি মামলা দায়ের করেন।

জব্বারের মা বলেন, ‌’বিয়ের পর থেকে বউটা তাদের বাড়িতেই থাকত। কখনো আমার বাড়িতে আসে নাই। হিমায়ারা ও তার মায়ের কাছে আমার ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাত। জমি লিজ নেওয়ার জন্যও অনেকগুলো টাকা মেয়ের বাবা, চাচাকে দেওয়া হয়েছে। পরে হিমায়ারা, তার বাবা-মায়ের নানারকম কীর্তিকালাপ দেখে আমার ছেলে যখন হিসাব চাইছে, টাকা চাইছে তখনই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা নানাভাবে আমাদের হেনস্তা করছে, হুমকি দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আমাদের নামে মিথ্যা মামলাও করছে। আমি ন্যায্য বিচার চাই।’

এ বিষয়ে জব্বারের স্ত্রী হিমায়ারা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে আমাকে বউ দাবি করে, কিন্তু তার সে কোনো দায়িত্ব পালন করে না। কোনো ভরণপোষণ দেবে না, আর হুট করে এসে বলবেন ১২ লাখ টাকা দিছি, এটা আমি মানব নাকি। একটা বিবাহিত মেয়ে তার নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ক্লাসমেটদের সাথে কথা বলবে না তো সে কি করবে। যেকোনো মানুষের জীবনে চলতে গেলে বন্ধুবান্ধব লাগবে, তাদের সাথে কথা বলতেই হবে। আর কথা বললেই যে তার সাথে খারাপ সম্পর্ক থাকবে তার কোনো মানে নাই। সে টাকা দেওয়ার যে ডকুমেন্টস দিচ্ছে সেটা সত্যা নাকি মিথ্যা তা কোর্টে প্রমাণ হবে।’

এ বিষয়ে হিমায়ারা খাতুনের বাবা হেলালুর রহমান বলেন, ‌’আমরা যখন কোর্টে তার বিরুদ্ধে একটা মামলা দিছি, তখন সে আবার আমাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দিছে ১৪ লাখ টাকার। যে মামলার কোনো ভিত্তি নাই। আবার আমাদের সাথে প্রতারণা করছে সেটা হলো জব্বার আগে একটা বিয়ে করেছিল। সেই পক্ষের একটা বিয়ের উপযুক্ত মেয়েও অোছ। সেটা আমাদের কাছে লুকিয়েছিল। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের গ্রামে, ফাঁড়িতে, থানায় বসে কয়েকটা সালিশ হয়েছে। সে কোনো সালিশই মানে নাই। দুই পক্ষেরই কোর্টে মামলা চলমান। সেখানে যা হবার হবে।’

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। থানায় কোনো অভিযোগও আসেনি। যেহেতু বলছেন আদালতে মামলা করেছে উভয় পক্ষ তাহলে সেখানেই ফায়সালা হবে।’

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x