২৩ আগস্ট ২০২৫ শনিবার
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ৫:২৬ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য বাউবি একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: উপাচার্য

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ৫:২৬ পিএম
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য বাউবি একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: উপাচার্য

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেছেন, সমাজের সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আপনারা শিক্ষিত হয়ে নিজের অধিকার আদায় করবেন, এটা আমরা চাই। আপনাদের শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্তকরণে বাউবি সকল সুযোগ-সুবিধা দেবে। চাকরির জন্য বাউবি নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করা যায় কি-না তা ভবিষ্যৎ বিবেচনায় রাখতে চাই।

বাউবির বিভিন্ন শিক্ষা প্রোগ্রামের আওতায় গঠিত বিশেষ কমিটির আয়োজনে ‘তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার মূল ধারায় অন্তর্ভুক্তকরণ এবং রাষ্ট্র ও সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালা মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত সকাল ১১টায় এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সাঈদ ফেরদৌস।

প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম আরো বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত করা অত্যন্ত জরুরি। বাউবি এই জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহা. শামীম। বক্তারা বলেন, শিক্ষার আলো সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তার নামের মতোই সর্বস্তরের মানুষের জন্য শিক্ষা সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে।

এসময় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা নিজেদের যাপিত জীবনের দুঃখ, কষ্ট ও নির্যাতনের নানা চিত্র তুলে ধরেন। তানিশা ইয়াসমিন চৈতি বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকে যেন অভিশপ্ত। একজন মানুষ হিসেবে কখনোই মূল্যায়িত হইনি। পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুকেও বাবা-মায়েরা যত্ন নেন কিন্তু হিজরা সন্তানের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটি হয়। স্কুল থেকে আমাকে বিদায় নিতে হলো ১১ বছর বয়সে। ১৪ বছর বয়সে ছাড়লাম পরিবার। ভাইবোনদের মায়া, বাবা-মায়ের স্নেহ ভালোবাসা ত্যাগ করে এক রাতের আঁধারে বেরিয়ে পড়ি অজানা ঠিকানায়।‘ প্রিয়া হিজরা বলেন, ‘বাসায় অবজ্ঞা, প্রতিবেশীদের বুলিং অপমান, পথে ঘাটে বঞ্চনা, নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি সব কাঁধে নিয়ে চলে আমাদের জীবন। এই জনগোষ্ঠীর প্রায় সকলেরই প্রারম্ভিক জীবনের গল্প একই রকম।’

কর্মশালায় এভাবেই নিজেদের দুঃসহ জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের নানা অলিগলির গল্প বললেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীবৃন্দ।

এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বাউবির রেজিস্ট্রার, ডিন, পরিচালক, আঞ্চলিক পরিচালকসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে কাজ করা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক, বিভিন্ন এনজিওর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গবেষকবৃন্দ।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ শিক্ষা উপকরণ, নমনীয় ভর্তিপ্রক্রিয়া এবং মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কর্মশালার আলোচ্য বিষয়সমূহ ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারণী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদ্যোগকে সমাজে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে কাজ করা গবেষকদের পক্ষ থেকে পার্টিসিপেটরি অ্যাডভান্সমেন্ট সোশাল সার্ভিস-পাশ, রংপুর এর নির্বাহী পরিচালক ও গবেষক কে এম আলী সম্রাট ‘লোঁককথা, পুঁথি সাহিত্য ও হিজরা জনগোষ্ঠীর ওপর’ রচিত কয়েকটি গ্রন্থ মাননীয় উপাচার্যকে উপহার হিসেবে প্রদান করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) খালেকুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x