২ আগস্ট ২০২৫ শনিবার
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১:৫৮ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

আগের সব সংস্থার নিবন্ধন বাতিল, কমল পর্যবেক্ষকের বয়সও

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১:৫৮ পিএম

গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ প্রতিবেদন দিয়েছিল, তারা আর নিবন্ধন পাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি আগের নিবন্ধিত ৯৬টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার সবগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশনের প্রকাশ করা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় এ কথা জানানো হয়েছে। নতুন এই নীতিমালায় একই সঙ্গে পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধনের বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর করা হয়েছে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও সমমান থেকে বাড়িয়ে এইচএসসি ও সমমান নির্ধারণ করেছে।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক শরিফুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিগগির একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি নতুন পর্যবেক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করবে কমিশন। এদিকে, প্রায় ৬০ লাখ নতুন ভোটারকে তালিকায় যুক্ত করতে আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তাবে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বিদ্যমান আইন অনুয়ায়ী, প্রতিবছরের মার্চে ভোটার তালিকায় নতুনদের যুক্ত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রস্তাবিত আইনে ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে বা যৌক্তিক সময়ে’ ১৮ বছর বয়সীদের ভোটার করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব তথ্য জানান।

প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। এর পর ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, তারা ওই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান না। নতুন আইনের ফলে তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ
ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত ৯ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা চূড়ান্ত করে কমিশন। এই ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’-এর মাধ্যমে ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৩’ রহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই নীতিমালার অধীন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন অকার্যকর ও বাতিল করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আগের তিন নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে থাকা সংস্থা জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ সমকালকে বলেন, এটা ইসির নিবন্ধনের রাজনীতি। জানিপপসহ বেশ কিছু পর্যবেক্ষক সংস্থা ৩০ বছর ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে আসছে। যারা গত নির্বাচনের আগেও নিবন্ধন পেয়েছিল। তবে গত কমিশন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা ড. আদিলুর রহমান খান শুভ্রের প্রতিষ্ঠান ‘অধিকার’কে নিবন্ধন দেয়নি বা বাতিল করেছে। মূলত এ কারণেই বর্তমান কমিশন সেটাকে জাস্টিফাই করতেই বাকি সব সংস্থার নিবন্ধনও বাতিল করল, এর পেছনে এক ধরনের নিবন্ধনের রাজনীতি কাজ করেছে।

তাঁর মতে, পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের গত তিন নির্বাচনের বিষয় কমিশন যদি আমলে নিয়ে এ ধরনের বিষয় যুক্ত করে তাহলে তা ঠিক হবে না, এ ক্ষেত্রে গত ১২ নির্বাচনের বিষয় বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন’ কথার মধ্যে ফাঁক রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে অনেক অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষককে নির্বাচনের বাইরে রাখার একটা অপচেষ্টা হতে পারে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আবদুল আলীম ইসির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় ‘বিতর্কিত’ পর্যবেক্ষক সংস্থাকে বাদ রাখার উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন। সমকালকে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন থেকেও সুপারিশ করা হয়েছিল আগের বিতর্কিত নির্বাচনগুলোকে যারা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল, এমন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে বাদ দিতে।

তিনি বলেন, গত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, যেসব পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিল, তারা বিদেশি পর্যবেক্ষকদেরও ‘স্থানীয় পর্যবেক্ষক’ বলে চালিয়ে দিয়েছিল। নীতিমালায় এমন কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো এ সুযোগ পেয়েছিল। এরাই আবার ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব’ হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন দিয়ে বিতর্কিত নির্বাচনগুলোকে এক ধরনের বৈধতা দিয়েছিল। সে বিবেচনায় ইসি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন দেওয়া বিতর্কিত সংস্থাগুলোকে বাদ দেওয়ার সুযোগ রেখে নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ নিয়েছে।

নীতিমালায় যা আছে
নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হতে হলে এইচএসসি পাস বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে। পর্যবেক্ষকদের সর্বনিম্ন বয়স হবে ২১ বছর। নীতিমালায় এটি শুধু দেশীয় পর্যবেক্ষকের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য প্রযোজ্য হবে। নতুন নীতিমালার আলোকে আগ্রহী সংস্থাকে নির্বাচন পর্যক্ষেণের জন্য আবেদন করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দেবে ইসি। নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাকে তিন দিন পর্যবেক্ষণ করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থা নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরের দিন পর্যবেক্ষক মোতায়েন করতে পারবে। আর নির্বাচন শেষ হওয়ার সাত দিনের মধ্যে পর্যবেক্ষক সংস্থাকে প্রাথমিক প্রতিবেদন ইসিতে জমা দিতে হবে।

এ নীতিমালা অনুযায়ী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নীতিমালা মেনে আবেদন করতে হবে আগ্রহীদের। এরপর যাচাই-বাছাই শেষ করে ইসি-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিষয়ে দাবি-আপত্তি থাকলে সেটি জানানোর জন্য ১৫ কার্যদিবস সময় দিয়ে দৈনিক পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেবে নির্বাচন কমিশন। কারও বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ছাড়া পর্যবেক্ষকদের অন্যান্য যোগ্যতা, শর্ত, আচরণমালাসহ অন্য বিষয়গুলো আগের মতোই রাখা হয়েছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x