৮ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ৬:৪৫ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

পাচারের এক ভয়ংকর চিত্র, মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায়ই বিক্রি হচ্ছে শিশু

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ৬:৪৫ পিএম

মাতৃগর্ভ রিজার্ভ করে জন্মের পরই বিক্রি করে দেওয়া হয় শিশুদের। এভাবেই পাচার করা হয়েছে অন্তত ২৫টি নবজাতককে। শিশু পাচারের আন্তর্জাতিক এই চক্রকে প্রকাশ্যে এনেছে পুলিশ। ২০২৩ সাল থেকে সক্রিয় এই চক্র এ পর্যন্ত অন্তত ২৫টি শিশুকে সিঙ্গাপুরে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার পন্তিয়ানাক এবং তাংরাং শহর থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ছয় শিশুকেও পাচারের আগেই উদ্ধার করা হয়েছে। এই শিশুদের প্রত্যেকেরই বয়স এক বছরের মধ্যে।

পশ্চিম জাভা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালক সুরাওয়ান জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল থেকে সক্রিয় এই চক্র পন্তিয়ানাক ও তাংরাং শহরকে কেন্দ্র করে কাজ করছিল। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে চক্রের সঙ্গে জড়িত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি পাচারের আগেই ছয় শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, এই চক্র মূলত গরিব, অসহায় কিংবা সন্তান পালন করতে অনিচ্ছুক বাবা-মা বা গর্ভবতী নারীদের টার্গেট করত। অনেক সময় সন্তান জন্মের আগেই তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হতো। জন্মের পর শিশুর ডেলিভারির খরচ বহন করত পাচারকারীরা। এরপর পরিবারকে কিছু অর্থ দিয়ে নবজাতকটিকে নিজেদের হেফাজতে নিত তারা।

পাচার প্রক্রিয়া ছিল সুপরিকল্পিত। প্রথমে শিশুদের পন্তিয়ানাকে এনে রাখা হতো। এরপর তাদের ভুয়া পাসপোর্ট ও ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করা হতো, যাতে বিদেশে পাঠাতে কোনো সমস্যা না হয়। মায়েদের কাছ থেকে শিশুদের আলাদা করার পর কেয়ারটেকারদের তত্ত্বাবধানে কয়েক মাস রেখে পরে সিঙ্গাপুরে পাচার করা হতো।

পুলিশ জানায়, এই চক্রে কেউ শিশু সংগ্রহ করত, কেউ তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিত, আবার কেউ ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করত। পাচার হওয়া শিশুদের প্রতিটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ থেকে ১৬ মিলিয়ন ইন্দোনেশিয়ান রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন স্বীকার করেছে, তারা এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জন ছেলে এবং ১৩ জন মেয়েশিশুকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিক্রি করেছে। মানবপাচারের এই নির্মম চিত্র ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

পশ্চিম জাভা পুলিশের ডিরেক্টর জেনারল অব ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন সুরাওয়ান বিবিসি নিউজ ইন্দোনেশিয়াকে বলেন, এই শিশুদের প্রথমে পন্তিয়ানাকে এনে রাখা হয়েছিল। পরে তাদের অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্র মূলত এমন বাবা-মা বা গর্ভবতী নারীদের নিশানা করতো যারা কথিতভাবে নিজেদের সন্তানদের লালনপালন করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।

পশ্চিম জাভার পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছু ক্ষেত্রে তো শিশুরা মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই বুকিং হয়ে যেত। শিশুর জন্মানোর পর, ডেলিভারি সংক্রান্ত খরচ বহন করতো ওই পাচার চক্র। তারপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিবারকে টাকা দিয়ে ওই শিশুকে নিয়ে যাওয়া হতো।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x