৭ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১১:০০ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

অর্থনীতিতে স্বস্তি এলেও আত্মতুষ্টির জায়গায় আসেনি: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১১:০০ পিএম

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসেছে। তবে এখনও নিরাপদ পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছায়নি। স্বস্তি এসেছে অর্থনীতিতে, কিন্তু এখনও তৈরি হয়নি আত্মতুষ্টির জায়গা। বাংলাদেশকে একটি সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থনৈতিক খাতের বড় সংস্কারগুলো কিছুটা করে যেতে পারব আমরা। বাকিটা নির্বাচিত সরকার এসে করবে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা এখন হতাশাজনক নয়। এমন কিছু আমরা করে যেতে চাই, যাতে পরের সরকার এসে বলতে না পারে আগের সরকারের সব ভুল ছিল।

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অর্থনীতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এতে বক্তব্য প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রমুখ।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নির্বাচিত সরকার অব্যহত রাখবে- এমন প্রতিশ্রতি রাজনৈতিক দলগুলো দিয়েছে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থনীতির কিছু বেসিক সংস্কার করব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, তাই জানুয়ারি পর্যন্ত স্বাভাবিক সংস্কার চালাতে পারব। রাজনীতিবিদদের আমরা বলেছি, এসব কাজে যদি তোমরা বাধা দাও, তাহলে এসব ঝামেলা তোমাদের সরকারের ওপর পড়বে। তারাও এসব সংস্কার কার্যক্রম অব্যহত রাখতে চায়। তবে কোনো সরকার যদি এসব যদি উলট–পালট করে দেয়, তাহলে ভালো কাজগুলো অব্যহত রাখতে জানগণ চাপ দেবে। তিনি আশা করেন দেশের স্বার্থে এসব সংস্কার কার্যক্রম রাজনৈতিক সরকারও অব্যাহত রখবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতিকে আমরা এসে যে অবস্থায় পেয়েছি, এখন তা মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে এসেছে। আমরা এসে দেখেছি অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব, মুদ্রা পাচার। আমরা বলি অর্থনীতি ছিল খাদের কিনারে। অনেকেই বলেন আইসিইউতে ছিল। আগের সরকারের সময়ে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। তিনি বলেন, সেখান থেকে উন্নতি করতে সরকার কাজ করছে। যেমন গত বছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ শতাংশ। এ বছরের জুলাইয়ে তা কমে ৮ শতাংশের ঘরে এসেছে। শিগগিরই তা ৬ শতাংশে নেমে আসবে।

দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে আইসিইউ হয়ে এখন কেবিনে ফিরছে, এটি কবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনীতি এখনও কেবিনে ফেরার মতো অবস্থায় নেই। আর গরিব দেশের অর্থনীতি কেবিনে ফিরবে না। পেয়িং বেড বা ওয়ার্ডে ফিরবে, তারপর বাড়ি ফিরবে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী জানুয়ারির মধ্যেই দেশের অর্থনীতি ওয়ার্ডে ফেরার মতো অবস্থায় পৌঁছাবে।

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার সব প্রক্রিয়া শেষ করছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য গঠিত টাস্কফোর্স কাজ করছে। কারা অর্থ পাচার করেছে, সেটি চিহ্নিত করা হচ্ছে। আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। তবে দেশের মধ্যে দুর্নীতির টাকা ফেরত আনা যত সহজ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা তত সহজ নয়।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এক বছরের মধ্যে একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, রিজার্ভ সংকট, বৈদেশিক বিনিয়োগের ধীরগতি ইত্যাদি। তবে ধাপে ধাপে বিভিন্ন নীতিমালা করা হয়েছে। সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে ফিরছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার গত অর্থবছরে ছিল, যেখানে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশের মতো, চলতি অর্থবছর শেষে তা ৫ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারিখাতে আস্থা ফেরানো এখনও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ফেব্রুয়ারিতে নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর তারা কোন ধরনের নীতি গ্রহণ করে, তার ওপর বেসরকারি খাতের আস্থা ফেরার বিষয়টি নির্ভর করছে। সারা পৃথিবীটাই এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প ইজ দ্য বিগেস্ট প্লেয়ার অব দ্য আনসারটেনিটি।

ব্যাংকখাতে এখনও সমস্যায় আছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক ব্যাংক এখনও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। আমানতকারীদের ফেরত দেওয়ার জন্য একটি ব্যাংককে অনেক টাকা দেওয়া হয়েছে, তারপরও ব্যাংকটি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। সেই টাকা কোথায় গেল, সেটিও আমরা দেখব।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে যেভাবে অর্থ লুট করা হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও এভাবে ব্যাংক খাতের অর্থ লুট করা হয়নি। তবে গত এক বছরে ব্যাংকখাতে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। এক বছরে আমরা সব করে ফেলেছি, তা নয়। তবে আমরা সঠিক পথেই যাত্রা শুরু করেছি। আরও দ্রুত গেলে ভালো হতো। আমাদের কাজে কোন ভুল-ত্রুটিও থাকতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক পুনর্গঠনের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে কত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা বলা যাবে না। তবে আমরা শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি যে, কোনো আমানতকারীর টাকা মাইর যাবে না। প্রত্যেক আমানতকারী তাদের টাকা ফেরত পাবেন। তিনি আরও বলেন,আমার ছাত্র [বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর] তো সব বলে ফেলে। আমি কিন্তু বলতাম না। গভর্নর যেসব ব্যাংক নিয়ে পুনর্গঠনের কথা বলেন, তাদের ডিপোজিট কমে যায়।

উপদেষ্টা বলেন, কোন ব্যাংকের সঙ্গে কোন ব্যাংক একীভূত করা হবে, সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। কোন কোন ব্যাংক এতে রাজি হচ্ছে না। তবে কবে নাগাদ ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন করব, সেটা নিয়েও মনে মনে চিন্তা আছে। ৩৫টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনেকে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। সেখানে পিকে হালদাররা অর্থ আত্মসাত করেছে।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, তিনি গভর্নরকে বলেছেন যে, যেসব ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না, তাদের কাছে আমানতকারীদের পাওনা কত এবং তা কীভাবে পরিশোধ করবে; সরকার এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।

রিটার্নে আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য না দিলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা কোনোভাবেই করদাতাদের ভয় দেখাতে চাই না। আমরা শুধু সচেতন করতে চাই। শূণ্য রিটার্নের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়। অসত্য তথ্য যদি দেওয়া হয় সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেই বিষয়টাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এনবিআরে আন্দোলনের পর গণহারে ছাটাই চলছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব কর্মকর্তা সীমা লঙ্ঘন করেছেন তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গণহারে চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেনি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x