২২ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

পাথর কাণ্ডে সিলেট জুড়ে তোলপাড়! কার ক্ষতি কার লাভ?

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথরে অবাধ লুটপাট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিলেটের নেটিজেনরা । গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই লুটপাট সাম্প্রতিক দুই সপ্তাহে ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলে অভিযোগ। এতে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতাদের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। ইতিমধ্যেই সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করেছে দলটি।

এদিকে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে—সাদা পাথর জিরো পয়েন্ট ও বাঙ্কার এলাকায় কোদাল-বেলচা দিয়ে পাথর তুলে নৌকায় বোঝাই করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও লুটের ভাগ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

স্থানীয়দের দাবি, গত দুই-তিন মাসে দিনরাত মিলিয়ে অন্তত হাজারের বেশি নৌকা পাথর লুট হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা এই পাথর বিক্রি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে পরিবেশের পাশাপাশি দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রটির অস্তিত্বই হুমকির মুখে।

মো. ডালিম আহমেদ নামে একজন ফেইসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, হৃদয়ে প্রশান্তি দেওয়া এই জায়গার সব পাথরও নাকি হজম করে ফেলেছে। গ্রেট বইঙ্গারা পাথরও খেয়ে ফেলতে জানে। ৮-৯ মাসের ব্যবধানে সব শেষ। সবার আগে কৈফয়ত চান উপদেষ্টাদের কাছে। পাথর হজমের তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে ওখানে সেনাবাহিনীর ছোট্ট একটা টিমের ক্যাম্প করে রাখলেই তো সব ঝামেলা মিটে যেতো। এছাড়াও নানা উপায় তো ছিলো সাদা পাথর রক্ষা করার জন্য। ১৭ বছরের ক্ষুধার যন্ত্রণায় পাথরও হজম।

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের অন্যতম খেলোয়াড় রুবেল হোসেন ফেইসবুকে লিখেন, সিলেটের সাদা পাথর নেই তো, হারাবে সিলেটের সৌন্দর্যের গল্প। সাদা পাথর লুটেদের থামাও— প্রকৃতি লুট নয় প্রকৃতি রক্ষা করুন ।

খেলোয়াড় এবং রোটারি ইন্টারন্যাশলানের সাবেক সভাপতি আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী লিখেন, বিগত সরকার এর পতনের সাথে সাথেই লুট করা শুরু হয় সাদা পাথরের সেই অনিন্দ্য সুন্দর পাথরগুলো। মাখখানে একটু আটকানোর চেষ্টা হলেও তা ধোপে টেকেনি। গত কিছুদিনে যা অবশিষ্ট ছিলো তার সাথে মাটি খুড়েও পাথর লুটে শেষ করে দেয়া হয়েছে।

এলসির পাথরের সাথে রাতের আধারে এসব পাথরও প্রতিদিন চলে যাচ্ছে ট্রাক ভরে ভরে। রাত হলেই শয়ে শয়ে ট্রাক পাথর নিয়ে এই পথে ছুটতে থাকে। প্রশাসন কেনো আছেন, কি করছেন জানিনা। হয়তো সিলেটের সুশীল সমাজেরও অনেক বড় বড় মাথারা ভাগ যোগ পেয়ে চুপ আছেন, তাও জানিনা। শুধু জানি আমাদের প্রকৃতি লুট হয়ে যাচ্ছে।


এভাবেই জাফলংকে শেষ করা হয়েছে, আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। এখনো ঘুমিয়ে আছি। কদিন পর যখন পর্যটক আসবেনা তখন এই পর্যটন নগরীর হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন ব্যাবসায়ীরা কি করবেন?

পরিবেশ ও উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র এখন বিরানভূমি, পরিবেশের কথা না হয় বাদই দিলাম। এখানে পর্যটনের উপর হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান নির্ভরশীল। অনেক গুলো নৌকা, মাঝি, দোকানদার এই পর্যটন কেন্দ্র টিকে না থাকলে বেকার হয়ে যায়। এদের পরিবারগুলো কি গুরুত্বপূর্ণ না? এই লুটপাটে তো গরিবের চেয়ে ধনীরাই বেশি লাভবান হচ্ছে। এ যেন ডিম পাড়া হাঁস মেরে ফেলার শামিল। অন্যদিকে পরিবেশ সুরক্ষার কথা বললেই একদল লেগে যান প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে। ভালো। আপনারা যা ভাল মনে করেন।

ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট সাউথ এশিয়া রিজিওনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের ডেপুটি কোর্ডিনেটর এফ আমীন তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, সাদাপাথর দেশের একটি স্বীকৃত পর্যটন কেন্দ্র, দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ স্বচ্ছ জলের পাথুরে এ পর্যটন কেন্দ্র। এ সম্পদ পর্যটন কেন্দ্রের আয়ের জিম্মাদার প্রশাসন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের ব্যর্থতায় এ পর্যটন স্পটে পাথর লুটের ঘটনা ঘটলো। এজন্য সম্পুর্ণ দায়ী জেলা প্রশাসন। পাথর লুট ও পর্যটন কেন্দ্র ধ্বংসের সাথে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x