রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার জেনেভা ক্যাম্প যেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য। মাথায় মামলার পাহাড় নিয়েই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দাগি মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা। মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও দু-তিন মাসের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে তারা। খোদ আইনের লোকই বলছেন, সিআরপিসির যথাযথ ব্যবহার না থাকায় অনায়াসে জামিন পেয়ে অপরাধ সংঘটনে পিছপা হচ্ছে না অপরাধীরা।
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প। রাজধানীর অন্যতম অপরাধপ্রবণ একটি এলাকা। বিভিন্ন সময়ে হত্যা, মাদক ব্যবসা, মাদক ব্যবসায়ী চক্রের অন্তর্কোন্দলসহ নানা কারণে হয়েছে খবরের শিরোনাম। থেমে নেই যৌথ বাহিনীও। একের পর এক অভিযান চালিয়ে মাদক, টাকা, অস্ত্র উদ্ধার করে যাচ্ছেন তারা। তারপরও থামছে না অপরাধ। অতি সম্প্রতি মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে প্রাণ যায় এক ব্যক্তির। পুলিশ বলছে, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অপরাধীদের একাধিকবার গ্রেফতার করেছেন তারা।
মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জুয়েল রানা বলেন, বুনিয়া সোহেল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গোলাগুলি করে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৪০ এর মতো মামলা। সে রমজান মাসে জামিন পায়। আরেক মাদক সম্রাট পিচ্চি রাজার বিরুদ্ধে একটা লিস্টেই ১২টা মামলা। সেও এক মাস আগে জামিনে বের হয়েছে। কুখ্যাত মাফিয়া চুয়া সেলিমের বিরুদ্ধে ৩৭ মামলা। রমজানের এক মাস আগে সে জামিনে মুক্তি পায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা গত ১০ মাসে এদের এমনভাবে দমন করেছিলাম যে এদের অস্তিত্বই ছিল না। জেনেভা ক্যাম্পের কুখ্যাত সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেল, তার ভাই টুনটুন, কুখ্যাত সন্ত্রাসী চুয়া সেলিম ও পিচ্চি রাজা প্রত্যেকেরই মাথার ওপর রয়েছে মামলার পাহাড়। এগুলো মাথায় নিয়েই নিত্যনতুন অপরাধে এবং মামলায় জড়াচ্ছেন তারা। এক দুই মাসের মধ্যেই বেরিয়ে আসছেন জামিনে, ঘটাচ্ছেন আরও বড় অপরাধের ঘটনা।
সিএমএম কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর জানালেন পুলিশের মামলা সাজানোতে দুর্বলতা থাকায় সহজেই জামিন পেয়ে যায় অপরাধীরা। আইনজ্ঞরা বলছেন, অপরাধী জামিন পেয়ে পুনরায় অপরাধে জড়ালে জামিনদার, জিম্মাদারদের দায়ী করার বিধান শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।
ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, জামিন যদি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে না পায় তখন তারা সেশন জজ কোর্টে যায়। সেশন জজ কোর্টে জামিন না পেলে সেই মামলা হাইকোর্টে যায়। হাইকোর্টের অবারিত ক্ষমতা। হাইকোর্ট আসামিকে জামিন দিতে পারে। সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞ, প্রত্যেকেই বলছেন, চিহ্নিত অপরাধীর জামিন ঠেকানো না গেলে সমাজে বাড়বে অপরাধ। ফিরবে না শৃঙ্খলা।