মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকে ইউক্রেনের মানচিত্র বলপূর্বক ও মৌলিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জোর জল্পনা চলছে। আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের বিশাল অংশের ওপর দাবি করে আসছে রাশিয়া। তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে তাঁর প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি কয়েক মাসের মধ্যে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ তুলনামূলক রক্তপাতহীন আগ্রাসনে দখল ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেন। এর পরই পূর্ব দোনবাস অঞ্চল, বিশেষ করে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আট বছর ধরে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। এ সময় ইউক্রেনের প্রায় ১৪ হাজার সেনা ও বেসামরিক মানুষ নিহত হন। পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন তাঁর পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ শুরু করেন। রুশ সেনারা দ্রুত কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছে দক্ষিণের বিশাল অংশ দখল করে।
এর মধ্যে আরও দুটি অঞ্চল– জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের বড় অংশও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন থেকে যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের অপেক্ষাকৃত কম অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০২২ সালে যেখানে ২৭ শতাংশ অঞ্চল তাদের দখলে ছিল, এখন তা কমে ২০ শতাংশ হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এখন একটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। ইউরোপীয় মিত্ররাও যুদ্ধ বন্ধের ওপর জোর দিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এটাই অর্জনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় শীর্ষ সম্মেলনের আগে ট্রাম্প ইউক্রেনের ভূমি বিনিময়ের কথা বলা শুরু করেন। এটি কিয়েভ ও ইউরোপকে হতবাক করেছে। ট্রাম্প কোন ভূমির কথা বলছেন, অথবা এ বিনিময় কেমন হতে পারে– তা স্পষ্ট নয়। কারণ, প্রশ্নবিদ্ধ সব ভূখণ্ড আইনত ইউক্রেনের।
কার্যত রাশিয়া লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের পুরো অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইবে। কিছু প্রতিবেদন বলছে, পুতিন আশপাশের অঞ্চলেও দখল চাইছেন। এতে ক্রামাটোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের মতো শহর রাশিয়ার হাতে চলে যাবে। এসব এলাকার জন্য হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা প্রাণ দিয়েছেন। কিয়েভের জন্য এ ধরনের ছাড় দেওয়া কঠিন হবে। মস্কো এটাকে বিজয় হিসেবে দেখবে, যদিও তাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেন দনবাস ছাড়বে না।
আজ আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে যে ঐতিহাসিক সম্মেলন হবে, সেদিকে এখন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধ। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভেট্টি ফক্স নিউজকে জানান, বৈঠকে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করবেন ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে তিনি সব ধরনের সুযোগ বিবেচনা করবেন। দুই নেতা একে অপরের সঙ্গে একটি একান্ত বৈঠক করবেন। তারপর দ্বিপক্ষীয় মধ্যাহ্নভোজ ও সংবাদ সম্মেলন হবে।