২২ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:০৫ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

আলাস্কা কি পরবর্তী ইউক্রেন, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে স্থানীয়দের উদ্বেগ

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:০৫ পিএম

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকে কোন বিষয় বেশি গুরুত্ব পাবে? আপাতত যে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে তা হলো- ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ। এ বৈঠকের আগে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ‘ভূমি বিনিময়ের’ কথা উল্লেখ করেছেন। ২০১৪ সালে অবৈধভাবে ইউক্রেনের কিছু অংশ দখল করেছিল রাশিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, চলমান যুদ্ধেও দখল হওয়া কয়েকটি অঞ্চলের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে শুক্রবারের বৈঠকে।

ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বৈঠকে সম্মত হতে পারেন। যদি তিনি তাই করেন, তাহলে এ ঘটনা মিলে যাবে ১৯৩৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জার্মানির মিউনিখে হওয়া একটি চুক্তির সঙ্গে। মিউনিখের ওই চুক্তির পর বিশ্বাসঘাতকতার মতো ঘটনা ছিল। যেটিকে এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আলাস্কায় চুক্তি হলে সেটির পরিণতি কেমন হবে তা হয়তো সময়ই বলে দেবে।

১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিন ও ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এদোয়ার দালাদিয়ের। ওই চুক্তির মাধ্যমে হিটলার জার্মানির প্রতিবেশী চেকোস্লোভাকিয়ার একটি ভূখণ্ড পেয়ে যান। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে কয়েক মাসের মধ্যেই নাৎসি জার্মানি চেকোস্লোভাকিয়ার বাকি ভূখণ্ডের অধিকাংশই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ফলাফল- এর এক বছরেরও কম সময়ে ইউরোপজুড়ে যুদ্ধ শুরু হয়।

আলাস্কার বৈঠক থেকে যেমন ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তেমনই মিউনিখ চুক্তির বৈঠক থেকেও চেকোস্লোভাকিয়ার নেতা এডভার্ড বেনেশকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। মূলত, চেম্বারলিন ওই ভূমি বিনিময়ের মাধ্যমে একটি শান্তি চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হিটলার বল প্রয়োগের মাধ্যমে আরও অঞ্চল নিজেদের দখলে নেন।

দ্য কনভারসেশনের (যুক্তরাজ্য) সম্পাদক জো আদেতুঞ্জি বলছেন, আলাস্কার বৈঠকেও যদি পুতিনের অঞ্চল (ইউক্রেনের) নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ট্রাম্প সম্মত হন, তাহলে ইউক্রেনও চেকোস্লোভাকিয়ার মতো পরিণতি ভোগ করতে পারে। বিশেষ করে দনবাসের মতো অঞ্চল হারালে।

দনবাস ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। ২০১৪ সাল থেকে এর কিছু অংশ দখল করে রেখেছে রাশিয়া। বাকি অংশ কিয়েভের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। আলাস্কার বৈঠকে পুতিন এ অঞ্চলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অনুমতি পেলে সেটি হবে পুতিনের জন্য একটি বড় বিজয়।

বিবিসি বলছে, আলাস্কা বৈঠক থেকে পুতিন প্রথম যে জিনিসটি চান সেটি হলো স্বীকৃতি। ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমারা পুতিনকে একঘরে করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ট্রাম্প বৈঠকে বসতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে সেটির অবসান হয়েছে। বিশেষ করে এই বৈঠক সব মহলে যেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে, তা থেকে ক্রেমলিন দাবি করতেই পারেন যে- রাশিয়া আবারও বৈশ্বিক রাজনীতির শীর্ষ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার গণমাধ্যমেও বিষয়টিকে সেভাবেই উপস্থাপন করা হচ্ছে। সম্প্রতি বৈঠকের সূচি নির্ধারণের পর দেশটির ট্যাবলয়েড ‘মস্কভস্কি কোমসমোলেৎস’-এর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয় ‘একঘরে করার চেষ্টা শেষ হলো’।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পরাশক্তি হিসেবে ইউক্রেনের মতো দেশের কাছে রাশিয়া যুদ্ধে হারতে চায় না। এ জন্যই পুতিন যেকোনোভাবে বিজয় চান। চলমান যুদ্ধে অনেকাংশে দখলে নেওয়া ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে (দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন) পুতিন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান। তিনি চান ইউক্রেন এসব অঞ্চল ছেড়ে দিক।

তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক চাপ। এরই মধ্যে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের রপ্তানি কমে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। ভারতকে রাশিয়ার কাছে থেকে তেল না কিনতে চাপ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় ক্রেমলিন একটি সমঝোতায় যেতে চায়।

অপরদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে যুদ্ধ বন্ধের নায়ক হিসেবে দেখতে চান। অভিষেক (প্রেসিডেন্ট হিসেবে) অনুষ্ঠানের ভাষণেও নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার জন্য যে আকুল হয়ে আছেন সেটিও আর কারো কাছে গোপন নয়।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে চেষ্টার বিষয়ে বলে আসছেন। ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা বন্ধেও তিনি মধ্যস্থতা করেছেন। সবশেষ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে সংঘাত বন্ধে ভূমিকা রেখেছেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তাঁকে বেশ বেগই পেতে হচ্ছে। এর চূড়ান্ত চেষ্টা হিসেবে তিনি পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। যেখানে ভূমি বিনিময় করে হলেও তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতে চান।

রাশিয়ার কাছে নিজেদের অঞ্চল ছেড়ে দিতে ইউক্রেন রাজি নয়। সম্প্রতি ভলোদিমির জেলেনস্কি একাধিকবার বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব ইউক্রেন প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি সতর্ক করেছেন, দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হলো, ভবিষ্যতে আবারও রুশ আগ্রাসনের শঙ্কা জিইয়ে রাখা।

রাশিয়াও জানে ইউক্রেন অঞ্চল ছাড়ার প্রস্তাবে রাজি হবে না। কিন্তু ট্রাম্প যদি একবার ভূমি বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তি করে বসেন তাহলে ইউক্রেন আরও চাপে পড়ে যাবে। কিয়েভ অঞ্চল না ছাড়লে ওয়াশিংটন সব ধরনের সহযোগিতাও বন্ধ করে দিতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজ রেডিওকে ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে তিনি জেলেনস্কির সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

এদিকে ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকের আগে মিত্র দেশগুলো সফর করেছেন জেলেনস্কি। জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখান থেকে ন্যাটো প্রধানসহ ইউরোপের অন্য নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। সাক্ষাৎ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গেও। স্টারমার ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী ঐক্য গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x