আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন লাল গালিচায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন, তখন একটি আশাবাদী পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু বৈঠক শুরুর পর থেকে সবকিছু অস্পষ্ট হতে শুরু করে। সিএনএন জানায়, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠকের পর দুই প্রেসিডেন্ট অগ্রগতি ঘোষণা করতে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তারা ঠিক কী অর্জন করেছেন তা ব্যাখ্যা না করেই সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যান তারা। তবে কোনো চুক্তি হয়নি। ট্রাম্প যে যুদ্ধবিরতি চেয়েছিলেন, বৈঠক শেষে বাস্তবে তেমন কিছুই দেখা গেল না।
ট্রাম্প বলেন, আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি। যার বেশিরভাগই আমি বলব। তবে কয়েকটি বড় বিষয় আমরা অর্জন করতে পারিনি। তবে আমরা কিছুটা অগ্রগতি করেছি। তবে একটি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব। ট্রাম্প পুতিনকে বলেন, আমরা খুব শিগগির আপনার সঙ্গে কথা বলব এবং সম্ভবত খুব শিগগির আমাদের দেখা হবে। এ সময় পুতিন ইংরেজিতে বলেন, পরেরবার মস্কোতে।
পরে দুই জন সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যান। এতে স্পষ্ট হয়, বৈঠকটি সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। পরিস্থিতি এমনই হবে, তা বৈঠক শুরুর পর থেকে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছিল। এপি জানায়, ট্রাম্প-পুতিন যখন এলমেনডর্ফ বিমানঘাঁটির টারমাকে একে-অপরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন, তখনই ইউক্রেনে হামলার সতর্কতায় সাইরেন বেজে ওঠে। এর মাধ্যমে পুতিন তার যুদ্ধের ইচ্ছাকেই জানিয়ে রাখলেন। অথচ ট্রাম্প তাকে সম্মানের চাদরে ঢেকে দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প-পুতিন উভয়ই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের একটি অস্পষ্ট তথ্য দিয়েছেন। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল এবং অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা শান্তি চুক্তি করতে পারিনি, কিন্তু আমাদের চুক্তিতে পৌঁছানোর খুব ভালো সম্ভাবনা আছে।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি জানেন না আলোচনা সফল হবে কিনা। বৈঠকের পরও বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। ট্রাম্প বা পুতিন কেউই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোমিদির জেলেনস্কিকে পরবর্তী ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছুই বলেননি। অথচ ট্রাম্প পরবর্তী বৈঠকটির ব্যাপারেই আগে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পরই ট্রাম্পের লিমোজিনের জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়ার সময় পুতিনের হাসিই বলে দেয়, তিনি খোশমেজাজে আছেন। কারণ ২০২২ সালের ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে একঘরে হিসেবে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পা দিয়েই পুতিন হাসি দিয়ে বোঝাতে চাইলেন, তিনি বিশ্বের শক্তিশালী দেশেই সর্বোচ্চ সম্মান পেলেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তাদের হাসিমুখে অভিবাদনকে ‘ঐতিহাসিক করমর্দন’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়। পুতিন যখন ট্রাম্পের সাঁজোয়া যানে আরোহণ করেন, তখন তার একটি অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি দেখা যায়। যা মুহূর্তের মধ্যে রাশিয়ান নেতার বিশ্বব্যাপী কূটনীতিতে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত তুলে ধরে। অগ্রগতি ছাড়াই যেন বিজয় পেলেন তিনি।
ট্রাম্প যখন অবতরণ করছিলেন, ঠিক তখনই অবাক করা ঘটনাটি ঘটে। ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করবেন না। এর পরিবর্তে কেবল দুই নেতার দুজন করে সহকারী বৈঠকে যোগ দেবেন। অথচ এর আগে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, শীর্ষ সম্মেলনে দুই নেতার একান্ত সাক্ষাৎ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা এনপিআরকে বলেন, এই পরিবর্তনটা অনেক দেরিতে ঘটেছে, যার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে টারমাক থেকে বৈঠকের কক্ষে যাওয়া পর্যন্ত অতি সংক্ষিপ্ত যাত্রাই ট্রাম্পের লিমোজিনে দুই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কেউই ছিল না। তখন তারা কী নিয়ে কথা বলেছেন, তা কেবল তারাই জানেন।