দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি) পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য এখনও উপযোগী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। কাকে কিংবা কোন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠানো হচ্ছে, অবশ্যই জনগণের সেটি জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হচ্ছে, জনগণের সেটি জানার পরিষ্কার কোনো সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জাতীয় সংসদে কিংবা সরকারে প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে অবশ্যই তাদের জনগণের মুখোমুখি হয়ে আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে জনগণের রায় অর্জন করা জরুরি। পিআর পদ্ধতি এবং আরও দু-একটি ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে। এই ধরনের ভিন্নমত গণতান্ত্রিক বিশ্বে স্বীকৃত। এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে যারা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন, এর মাধ্যমে নিজেদের অজান্তেই গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছেন। একইসঙ্গে যদি গণতন্ত্র উত্তরণের পথে শর্তের পর শর্ত আরোপ করতে থাকেন, তাহলে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার পুনর্বাসনের পথও সুগম করছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আমরা খেয়াল করে দেখছি, এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য, মন্তব্য কিংবা নিত্য-নতুন শর্ত বা শর্তের প্রস্তাবনা সামগ্রিকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে। এই ভয়ে পলাতক স্বৈরাচার ‘বিএনপির বিজয় ঠেকাও’– এর মতো অপরাজনীতি চালু করেছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে এবার ক্ষমতাসীন সরকার নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সহযোদ্ধা কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর আচরণেও সেই পলাতক স্বৈরাচারের সরকারের মতো বিএনপির বিজয় ঠেকাও প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির বিজয় ঠেকানোর অপরাজনীতি করতে গিয়ে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদ সরকার দেশকে একটি তাঁবেদারি রাষ্ট্রে একটি বিশাল বড় জেলখানায় পরিণত করেছিল।
তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও যারা মনে করছেন, নির্বাচন দিলে জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে। যারা এই চিন্তা থেকে বিএনপির বিজয় ঠেকানোর জন্য নানা রকম অপকৌশলের বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছেন। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করুন, জনগণের শক্তির ওপরে আস্থা এবং বিশ্বাস রাখুন। বিএনপির বিজয় যদি জনগণ দিয়েই থাকে, সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের রায় প্রদানের পথ রুদ্ধ করবেন না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যকার বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া উচিত হবে না, যেই বিরোধকে পুঁজি করে পরাজিত ফ্যাসিবাদ নিজেদের অপকর্মগুলোকে জাস্টিফাই করার সুযোগ নিতে পারে। আমি মনে করি, প্রতিটি ইস্যুতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হতেই হবে। পলাতক ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন ঠেকাতে কিংবা দেশকে তাবেদার মুক্ত রাখতে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে অবশ্যই ঐকমত্য এবং ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই বাংলাদেশ কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা দলের নয়। এই বাংলাদেশ আপনার, আমার, আপনাদের এবং আমাদের সবার- দলমত ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালি, অবাঙালি, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী, এই বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র গর্বিত পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক সব ক্ষেত্রে, দেশের আইন অনুযায়ী সমান অধিকার ভোগ করবেন। এটি বিএনপির নীতি। এটি বিএনপির রাজনীতি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্বে ও দলের ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সহসম্পাদক অপর্ণা রায় দাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তপন চন্দ্র মজুমদার, এসএন তরুণ দে, মিল্টন বৈদ্য, পূজা উদযাপন ফ্রন্টের জয়দেব জয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।