নিখোঁজের পরদিন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকারের (৭১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার বিকেলে গজারিয়ার কলাগাছিয়া এলাকার চর বলাকিয়ায় তাঁর মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। খবর পেয়ে নৌ–পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে সন্ধ্যায় তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর স্বজনরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। তিনি কীভাবে সেখানে গেলেন, তাঁর মৃত্যুর কারণ কী তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নৌ–পুলিশের নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, মৃতদেহ দেখে ধারণা করা হচ্ছে একদিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতদেহ কিছুটা বিকৃত হতে শুরু করেছে। দেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
কলাগাছিয়া নৌ-ফাড়ির ইনচার্জ মো. সালেহ আহমেদ পাঠান বলেন, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে খবর আসে কলাগাছিয়া সীমানাঘেঁষা গজারিয়ার চরবলাকী এলাকার মেঘনা নদীতে একটি মরদেহ ভাসছে। খবর পেয়ে বিকেল ৩টার দিকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশের ছবি রমনা থানায় পাঠিয়েছেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, লাশটি নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের বলে তাঁর স্বজনেরা ছবি দেখে শনাক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার গলায় চশমাটি ঝুলছিল। রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তারিকুল ইসলাম বলেন, বিভুরঞ্জন সরকারের ছেলে ঋত সরকার বৃহস্পতিবার রাতে একটি জিডি করেছেন। মোবাইল ফোন সঙ্গে না নেওয়ায় প্রযুক্তিগতভাবে তাঁর সর্বশেষ অবস্থান জানা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে। এগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁর গতিপথ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য সূত্র থেকে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি। এ বিষয়ে রাজধানীর রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে কর্মস্থল বনশ্রীর আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে যাওয়ার কথা বলে তিনি বাসা থেকে বের হন। যদিও পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তিনি সেখানে যাননি। তিনি মোবাইল ফোনটিও বাসায় ফেলে যান।
আজকের পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, ১৬ আগস্ট থেকে সাত দিনের ছুটিতে ছিলেন বিভুরঞ্জন। বিভুরঞ্জন সরকারের ভাই চিররঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে লেখেন, আমার দাদা সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অন্যান্য দিনের মতো অফিস (আজকের পত্রিকা) যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি অফিসে যাননি। পরিচিত পরিমণ্ডলের কোথাও যাননি। আজ কেউ তাঁকে দেখেননি। রাত ১টা পর্যন্ত বাসায় ফেরেননি তিনি।