সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারোয়ার তুষার বলেছেন, ওয়েস্টিনে যেতে হলে পার্থ সাহেবদের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। তার এ বক্তব্যের বিষয়ে নীলা ইস্রাফিল বলেছেন, জনগণের টাকায় বিলাসিতা করা কোনো রাজনৈতিক অর্জন নয় বরং জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। শুক্রবার নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুকে একটি গণমাধ্যমের পোস্টকার্ড শেয়ার করেন তিনি। ছবির ক্যাপশনে এসব কথা বলেন এই নেত্রী। নীলার পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘অবশ্যই যাওয়া যায়, কিন্তু সেটা হতে হবে ব্যক্তিগত আয়ে অর্জিত টাকায়, জনগণের ঘামঝরা করের টাকায় নয়। জনগণের টাকায় বিলাস করা কোনো রাজনৈতিক অর্জন নয়, বরং জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নামে যারা জনগণের অর্থ অপচয় করে ব্যক্তিগত সুনাম বা বিলাসিতা বাড়াতে চান তারা প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতার চেতনাকে হত্যা করেন।’
‘সত্যিকারের নেতৃত্ব মানে হচ্ছে জনগণের সম্পদের পাহারাদার হওয়া, তাদের ঘামের টাকাকে মর্যাদা দেওয়া। তাই যদি কেউ হাঁসের মাংস খেতে পাঁচ তারকা হোটেলে বন্ধুদের নিয়ে যান, যেতেই পারেন, কিন্তু সেটা যেন নিজের কষ্টার্জিত আয়ে হয়, তাহলেই সম্মান থাকে, জনগণের কাছে আস্থা থাকে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মর্যাদা জনগণের টাকায় নয়, বরং জনগণের স্বার্থ রক্ষার মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়।’
‘যে উপদেষ্টা নিজের সামান্য বেতনে সংসারই চালাতে হিমশিম খায়, সে আবার কীভাবে ৫/৬ জনকে নিয়ে ওয়েস্টিনের মতো ফাইভ স্টার হোটেলে বসে হাঁসের মাংস খায়? এ খরচটা কি তার ব্যক্তিগত উপার্জন দিয়ে, নাকি জনগণের ঘামের টাকায়?
জনগণের টাকা দিয়ে বিলাসিতা করলে সেটা উপদেশ নয়, সেটা হলো জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। যে দেশের সাধারণ মানুষ এক মুঠো ভাতের জন্য লড়াই করে, সেখানে উপদেষ্টারা ফাইভ স্টারের টেবিলে হাঁসের মাংস চিবিয়ে রাজনীতির আড্ডা দেবে এটা লজ্জাজনক, এটা বিশ্বাসঘাতকতা। উপদেষ্টা যদি সত্যিই উপদেশ দিতে চান, তবে আগে জনগণকে শেখান কীভাবে তাদের টাকায় আপনার হাঁসের মাংসের বিল মেটানোটা গণতন্ত্রের অংশ হয়ে গেল?’
গত ১৫ আগস্ট সারোয়ার তুষার নিজের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, কোনো রকম রাজনৈতিক অর্জন ছাড়াই পার্থ সাহেব ওয়েস্টিনে যেতে পারবেন; কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে হাসিনা ও আওয়ামীমুক্ত করে নতুন সরকার গঠন করে সেই সরকারের দুইটা মিনিস্ট্রির মন্ত্রী হয়েও আসিফ সাহেব ওয়েস্টিনে যেতে পারবেন না। যেতে হলে পার্থ সাহেবদের ক্লিয়ারেন্স লাগবে।
আগে ক্যান্টিনে ভাত খুঁজত, আর এখন ওয়েস্টিনে হাঁস খোঁজে, যেন এর মাঝখানে কিছু ঘটে নাই। যেন মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র থেকে ছাত্রনেতা হয়ে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার রূপকথার মতো অসাধারণ বীরত্ব নাই। পার্থ সাহেব কি জানেন না দুইটা মিনিস্ট্রির রানিং মন্ত্রী এক-আধবার চাইলে ওয়েস্টিনে নাশতার বিল এফোর্ড করতে পারেন? জ্বি জানেন। তাহলে তার সমস্যা কোথায়? তার সমস্যা হলো তিনি মানতে পারছেন না কোনো রকম পারিবারিক লিগ্যাসি ছাড়া একজন ছাত্রনেতা বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়েছেন।
তিনি আরও লেখেন, বাংলাদেশের সাধারণের ছেলেমেয়েরা কেন রাষ্ট্র চালাবে? রাষ্ট্র চালাবেন পার্থ সাহেবের বাবা এবং সেই পারিবারিক সূত্রে পার্থ সাহেব। জ্বি, পার্থ সাহেব, আপনাদের রাজনীতি সফল হলে, এবারই আপনারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারতেন। কিন্তু সফল হয়েছে আসিফদের রাজনীতি। তাই তিনি মিনিস্ট্রি চালাচ্ছেন। তাদের অর্জনের ওপর ভর করে শিহগিরই আপনিও রাষ্ট্র ক্ষমতার কানাকড়ি পেলেও পেতে পারেন। অপেক্ষা করুন।
এই নেতা লেখেন, আপনারা তো চান বারবার নব্বই ঘটুক, তাই না? ছাত্রদের বুকের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দিক সামরিক স্বৈরাচার; হেলিকপ্টার থেকে গুলি করুক ফ্যাসিবাদী গণহত্যাকারী। ছাত্রদের আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটুক স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের; তারপর ছাত্ররা কুচকাওয়াজ ও সানাই বাজাতে বাজাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ক্ষমতা দিয়ে দিক!
ছাত্ররা কেন ক্ষমতার হিস্যা বুঝে নেবে! তারা আজীবন ক্যান্টিনের পাতলা ডাল খাবে আর গণরুমের নির্যাতনের শিকার হবে। আর ক্ষমতার মসনদে যাবেন রাজনীতিবিদ ও তাদের সন্তানরা। পার্থ সাহেব, আপনার বক্তব্যের জন্য আপনি শরমিন্দা হন। আপনার বক্তব্যে দগদগে শ্রেণিঘৃণা। কিন্তু আপনাদের শ্রেণি উত্তরণ কীভাবে ঘটল, সেইটা যদি ঘাঁটাঘাঁটি শুরু হয়, তাহলে বড় অপ্রিয় সত্য বের হয়ে আসে। এ কারণে কোনো এক জ্ঞানী বলেছেন: Those who live in glass houses, should not throw stones at others.